উম্মে সালমা লিরা।।
পুরো দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। তার মধ্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন মানুষ ও জীন কে। মানুষ ও জীন সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন— وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬
ফিতনা শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কুরআনে আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফিতনার কথা বলে সতর্ক করে দিয়েছেন; তেমনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বিভিন্ন বাণীতে ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
‘ফিতনা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ নৈরাজ্য, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, পরীক্ষা প্রভৃতি। আরবি ভাষায় এর সামগ্রিক অর্থ পরীক্ষা – নিরীক্ষা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের ৩ ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন।
– সন্তানদের দিয়ে
– অর্থসম্পদ দিয়ে
– জ্ঞান বা শিক্ষা দিয়ে
সন্তানদের দিয়ে পরীক্ষা: প্রতিটি মানুষের কাছে তার সন্তানরা অনেক প্রিয়। তাদের সুখ, দুঃখ, আপদ, বিপদ, সমৃদ্ধি ইত্যাদি থাকে বাবা-মার চিন্তার কেন্দ্র বিন্দুতে। যখনই এ ভালোবাসা আল্লাহার ভালোবাসার চেয়ে অধিক হয়ে যায় তখন তা ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানদের ভালোবেসে আমরা একমন অনেক কাজ করি যা আল্লাহ তায়ালার হুকুমের বিপরিত। আমরা তাদের দুনিয়ার সমৃদ্ধি নিয়ে এত চিন্তিত থাকি যে, তাদের ও নিজেদের আখিরাত নিয়ে চিন্তা করার সময় পাই না। সন্তানদের জন্য পিতা-মাতার প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো তাদের জন্য জাহান্নামকে ভয় করা।
অর্থসম্পদ: আমাদের অর্থসম্পদও আমাদের ফিতনার কারণ। শয়তান আমাদের অভাবের ভয় দেখায়। দান বা খরচ করলে সম্পদ কমে যাবে; ভবিষ্যতে অভাবের সম্মুখীন হতে পারি এইজন্য অর্থসম্পদ জমা করতে হবে; দুনিয়াতে ভালো খেতে হবে ; ভালো পরতে হবে ইত্যাদি সবই হলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। শয়তানের ওয়াসওয়াসাতে পতিত হয়ে আমরা সম্পদ ভবিষ্যতের জন্য জমা করতে শুরু করি। ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা খরচ বা দান করাতে আমাদের অনীহা। একসময় আমাদের মনে ঐ সম্পদের লোভ ঝেঁকে বসে যা থেকে আমরা বের হতে পারি না। সম্পদ ভবিষ্যতের জন্য জমা করতে করতে একসময় মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে।
শিক্ষা: আমাদের শিক্ষাও আমাদের ফিতনার কারণ। শিক্ষা ফিতনার কারণ হয় যে কারণে তারমধ্যে অন্যতম শিক্ষার সঠিক ব্যবহার না করা ও শিক্ষার অহংকার করা। বর্তমানে অনেকেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। দুনিয়াবী শিক্ষার পাশাপাশি আখেরাতের শিক্ষা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, ‘প্রতিটি মুসলমানের ওপর ইলম দ্বীন শিক্ষা করা ফরজ।’ (ইবনে মাজা : ২২৪)
স্কুল কলেজে পড়ার কারণে ইলমে জরুরিয়াহ জানা হয় না। ইলমে জরুরিয়াহ না জানার কারণে, নামাজ, পর্দা, হালাল-হারাম সম্পর্কে ঠিক ভাবে মানা হয় না। অথচ সবগুলোই ফরজ কার্যক্রম। অনেকে দ্বীনের শিক্ষা অর্জন তো করে, কিন্তু অহংকারের কারণে তাদের দ্বীনি শিক্ষাটাও তাদের জন্য ফিতনার কারণ হয়।
পরিশেষে; সন্তানাদি, অর্থসম্পদ ও শিক্ষা— এইসবগুলোই আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু এগুলো যাতে আখিরাতের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। আমাদের সন্তানদের কুরআন ও হাদিস শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। হালাল অর্থ সম্পদ অর্জন ও তা হালাল খাতে ব্যয় করতে হবে, দুনিয়ায় শিক্ষার সাথে সাথে পরকালের শিক্ষাও অর্জন করতে হবে তবেই আমাদের সন্তানাদি অর্থ সম্পদ ও শিক্ষা— ইহকাল ও পরকাল দুই জগতেই উপকারে আসবে।

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।