সাদত হাসান মান্টো ১৯১২ সালের ১১ মে পাঞ্জাব লুধিয়ানার পাপরউদি গ্রামের ব্যারিস্টার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মান্টোর পূর্বপুরুষ কাশ্মিরী বংশোদ্ভূত ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন: মান্টোর পিতা ছিলেন একজন আদালতের বিচারক । কঠোর শাসনেও মান্টো ছোটবেলা থেকে বোহেমিয়ান হয়ে ওঠেন। লেখাপড়ার হাতে খড়ি অমৃতসরের মুসলিম হাই স্কুলে। কিন্তু স্কুলের গন্ডিতে তার মন প্রাণ হাঁপিয়ে উঠতো। পড়ালেখায় অমনোযোগীতার কারণে স্বভাবতই দু’বার এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হন। কিন্তু স্কুলের পাঠ্য বহির্ভূত গল্প-উপন্যাসের বই পড়ার প্রবল আগ্রহ তাকে তরুণ বয়সেই অমৃতসর রেল স্টেশনের হুইলার বুকস্টল থেকে বই চুরিতে প্রলুব্ধ করেছিলো। ১৯৩১ সালে কলেজে পাঠকালীন অবিভক্ত ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের অশান্ত পরিবেশে মান্টোর লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৩২ সালে পিতার মৃত্যুর পর মান্টো আরো অসহায় হয়ে পড়েন। পরিবারের অর্থ কষ্ট লাঘবের জন্যে তখন থেকেই তিনি আয়-উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। সে সময় তার্কিক লেখক আবদুল বারি আলিগের সঙ্গে মান্টোর সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাৎ সাদত হাসান মান্টোর জীবনে একটি মাইলফলক।
সাহিত্য: আবদুল বারি আলিগ, সে সময়ের তরুণ লেখক মান্টোকে রাশিয়ান এবং ফরাসি ভাষা শিখতে উদ্বুদ্ধ করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই মান্টো, ভিক্টর হুগোর “The last Day of a Condemned Man” এর উর্দু অনুবাদ করেন। যা পরবর্তীকালে “সারগুজাস্ত-ই-আসির”( এক বন্দীর গল্প) নামে উর্দুতে প্রকাশিত হয়। এভাবে মান্টোর হাতে রাশিয়ান গল্পের উর্দু অনুবাদ “রাশি আফ্সানে” প্রকাশিত হয় এর পরেই। বিদেশী সাহিত্য উর্দু ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে মান্টো অন্য জগতের সন্ধান পান। কিংবদন্তি লেখক ভিক্টর হুুুুগগোগ, অস্কার ওয়াইল্ড, রাশিয়ান লেখক আন্তন চেখভ, মাক্সিম গোর্কি প্রমুখের সাহিত্য কীর্তির সাথে পরিচিত হন নিবিড়ভাবে।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন যুক্ত হন ইন্ডিয়ান প্রগ্রেসিভ রাইটার্স এসোসিয়েশনে, এখানে তার আলাপ হয় লেখক আলি সর্দার জাফরির সাথে। ক্রমশ তিনি হয়ে ওঠেন উর্দু সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় ছোটগল্পকার। তার বিখ্যাত গল্পের মধ্যে আছে বু, টোবা টেক সিং, তামাশা, ঠান্ডা গোশত, কালি সালোয়ার, খালি বোতল, ধুঁয়া ইত্যাদি। তার রচনায় দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা, দাংগা, মানব চরিত্রের বীভৎসতা বারংবার ঘুরে ফিরে আসে। প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক চিন্তার এই উর্দু ছোটগল্পকারকে তার মুক্তচিন্তার কারণে অপমানিত, লাঞ্ছিত হতে হয় ভারত পাকিস্তান দুই দেশেই। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে সপরিবারে তিনি লাহোর চলে যান। পাকিস্তানের কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, নাসির কাজমি, আহমেফ রহি প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সাহিত্যচর্চায় তার বিশেষ খ্যাতি হয়।
মৃত্যু: ক্রমাগত নিম্ন মানের সুরা পানে ‘মান্টো “লিভার সিরোসিস”-এ আক্রান্ত হন। তার জীবনযাত্রাও ছিল চূড়ান্ত বাউণ্ডুলে এবং বেপরোয়া। শরীরের প্রতি অযত্ন, অপ্রতুল চিকিৎসা, আর্থিক অনটন ইত্যাদিতে জর্জরিত মান্টোর বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহ ব্যাধির কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি তার অকাল প্রয়াণ ঘটে তার দ্বিতীয় আবাস ভূমি লাহোরে।

জন্ম কুমিল্লায়। নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলামে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছি পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।