ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কোরবানির হুকুম

কোরবানি দেয়ার মতো টাকার মালিক বা সম্পদ আছে কিন্তু ঋণগ্রস্ত; এ ব্যক্তির কোরবানির হুকুম কী? সে কি কোরবানি দিতে পারবে? কোরবানি না দিলে কি গোনাহ হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই-বা কী?

কোনো ব্যক্তির জন্য যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব বা আবশ্যক; সে পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত হয় তবে তার কোরবানি দেয়া আবশ্যক কি না, তা নির্ভর করবে ওই ব্যক্তির অবস্থার ওপর। আর তা হলো–

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত’ (সুরা আনআম: ১৬২)।

আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি ঋণগ্রস্ত থাকেন, তাহলে তার জন্য আগে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি। কারণ, শেষ বিচারের দিন হাদিস অনুযায়ী, পাওনাদারকে নিজের নেকি দিয়ে দিতে হবে নতুবা পাওনাদারের গুনাহ কাঁধে নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। এ ছাড়াও আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে গড়িমসি (দেব-দিচ্ছি) করার অভ্যাস থাকে তবে সে দুষ্টু লোক। আর গড়িমসি করা এক প্রকারের জুলুম। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বা)।

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঋণ করার পর মনে মনে সঙ্কল্প করে রাখে যে, সে ওই ঋণ পরিশোধ করবে না, তবে সে আল্লাহর সাথে চোর হয়ে সাক্ষাৎ করবে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৪১০)

তাই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কোরবানির দিনগুলোতে ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি না থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। আর ঋণ পরিশোধের পর যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/১৯৬; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯২)

কোরবানির নেসাব হলো, স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ (টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা)।

মনে রাখতে হবে, কোরবানির নেসাব জাকাতের মতো সারা বছর জমা থাকা আবশ্যক নয়; বরং কোরবানির দিনগুলোতে অর্থাৎ ‘১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম নর-নারী ঋণমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তবে তার কোরবানি করা ওয়াজিব।’ (রদ্দুল মুখতার: ৬/৩১২)

অনেকে ঋণ করে হলেও কোরবানি করে থাকেন, এমনটি অনুচিত। কারো কারো মনের অভিব্যক্তি হলো, ‘কোরবানির দিন আমার সন্তান কার মুখের দিকে চেয়ে থাকবে।’ এমন চিন্তা থেকে কোরবানি করলে কোরবানি হবে না, গোশত খাওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমার কাছে কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছে না, তবে আমার কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭)

রাসুলুল্লাহ সা. কোরবানি করা থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিদের অভিসম্পাত করেছেন। আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সা. বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমদ: ৮২৭৩; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩; হাকেম: ৭৫৬৫-৭৫৬৬)