ওয়েব ফিল্ম পুনর্মিলনে; প্রতিটি চরিত্র গল্পের প্রাণ

গত ২১ সেপ্টেম্বর ‘চরকি’র পর্দায় মুক্তি পেল মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘পুনর্মিলনে’। যেটির খবর প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক আলোচনায় ছিল। সিনেমাটি নিয়ে বলতে গেলে সবার আগে নির্মাতার লোকেশন সিলেকশন নিয়ে প্রশংসা করতে হয়। চা বাগানের এলাকার আঁকাবাঁকা পথ, উপর থেকে সবুজের সমারহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

পৌনে দুই ঘণ্টার এই সিনেমার আরও যেই বিষয়ে নির্মাতা খুব যত্ন দিয়েছেন তা হলো চরিত্র। প্রতিটি চরিত্রকে তিনি আলাদাভাবে ভেবে ডিজাইন করেছেন তা শেষ পর্যন্ত দেখলে বোঝা যায়। বাড়ির মুরুব্বি থেকে শুরু করে ছোটদের স্ক্রিন টাইম বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন আরিয়ান। যে দুটি চরিত্র নিয়ে একটু আলাদাভাবেই বলতে হয় তারা হলেন অন্তু ও নয়ন। নূর ইমরান মিঠুকে প্রথম দেখি ‌‌‘পিঁপড়াবিদ্যা’ সিনেমায়। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ে তার সাবলীলতা বরাবরই ভালো লাগবে। মিজানুর রহমান আরিয়ানের কারণে তার প্রতি ভালো লাগাটা বাড়লো। শুরুতে থেকে শেষ পর্যন্ত চরিত্রটি তিনি যেভাবে বয়ে নিয়ে গেছেন তা প্রশংসনীয়। আর ‘পুনর্মিলনে’র অন্তু হচ্ছেন সিয়াম আহমেদ। ধরা যাক আপনার সামনে একটি ফুলের বাগানে আছেন, সেখানে যেই ফুলের স্নিদ্ধতা আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করবে সে অন্তু। বিশেষ করে সিনেমার প্রায় শেষাংশ যেন অন্তুময়।

‌‌‘পুনর্মিলনে’ যে তাসনিয়া ফারিণ করছেন সেটি তো সবারই জানা। পুরো সিনেমায় অল্প সময় পাওয়া গেছে তাকে। হয়তো তিনি যেই চরিত্রে ছিলেন সেটির স্পেস নির্মাতা নিজেই খুব বেশি দিতে চাননি। অবশ্যই সেটি নির্মাতার নিজস্বতা। কিন্তু যেহেতু তাসনিয়া ফারিণের শেষ কয়েকটি কাজে তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে তাই হয়তো এখানে তার অভিনয়ের জায়গাটা পেলে দর্শক হিসেবে ভালো লাগতো। এবার একটু গল্প নিয়ে বলি। গল্প চলে বর্তমান আর অতীতের পথ ধরে। এমন ছকে গল্প বলাটাও নতুন না। মানে দর্শক এভাবে গল্প দেখে অভ্যস্ত। এটি বলার কারণ, নির্মাতা এখানে প্রতিটি সিকোয়েন্স যেভাবে গল্পটাকে গেঁথেছেন তার শুরুর অনেকটা সময় চোখে খটকা লাগার মতো। মানে মনে হবে একটা ঘটনা শুরু হয়ে সেটার শেষ না হয়েই অন্য ঘটনায় চলে গেছে।

আর এটি যখন কয়েকবার হয় তখন দর্শকের মাঝেও একটা অপূর্ণতা তৈরি হয়। যেহেতু বর্তমান ও অতীত গল্পের সংমিশ্রন তাই এই যত্নে খানিকটা কমতি দেখা গেছে। ‌‘পুনর্মিলনে’ যদি এবার একটা ফুলের ঝুড়ি ভাবেন সেখানে দেখবেন সব সুন্দর সুন্দর ফুল, শুধু মালা গাঁথাটা মনে হয় আরেকটু ঠিকঠাক হতে পারতো। তবে আপনি যখন সিনেমাটা দেখা শেষ হবে এসবকিছু যেন ভুলে যাওয়া যায়। তার কারণ সিয়াম আহমেদ। তিনি যে প্রতি নিয়ত অভিনয়ে আরও দক্ষ হয়ে উঠছেন ‘পুনর্মিলনে’ সেটি প্রমাণ করে। শেষ পর্যন্ত গল্পের আবেগ ধরে রেখেন এই অভিনেতা। সিনেমা শেষে ভাবনার বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই সিয়াম।