খরগোশের রোগ ও প্রতিকার

লম্বা কান, মায়াবী চোখের প্রানী খরগোশ। তাদের লাফিয়ে চলা আকৃষ্ট করে সবাইকে। ছোট্ট খাঁচায় শখ করে পুষে তাদের। বিশেষ করে পরিবারের ছোট সদস্যরা তাদের বেশি পছন্দ করে। খরগোশ পালন করে শখ পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে পারবেন, পারবেন পরিবারের জন্য গোশতের চাহিদা পূরণ করতে। খরগোশ পালতে হলে জানতে হবে তার রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে। না হলে আপনার পোষা প্রাণীটি চোখের সামনেই মারা যাবে।

মিক্সোমাটোসিস: এটি খরগোশের একটি প্রাণনাশক রোগ৷ আঙ্গোরা, ফ্লেমিস রাবিট, জ্যাক রাবিট ইত্যাদি প্রজাতির খরগোশের এই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেশী৷ এই ভাইরাস পক্স ভাইরাস শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত৷ রোগগ্রস্ত অবস্থায় খরগোশের প্রজনন ঘটালে মুখ, নাক, ঠোঁট, কান, চোখের পাতা ইত্যাদি অঙ্গে ইডেমা হয়৷ কান দেহ থেকে ঝুলে পড়তে পারে৷ কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট হয়৷

চিকিৎসা: এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই৷ রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিত্সা করতে হয়৷ সেফালেক্সিন বা এনরোফ্লক্সাসিন জলের সাথে মিশিয়ে খরগোশকে খাওয়ানো যেতে পারে৷

প্রতিরোধ ব্যবস্থা- অসুস্থ খরগোশকে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে। ফর্মালিন বা ৩ শতাংশ সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দিয়ে খরগোশের খামার জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রতিষেধক টীকা পাওয়া গেলে খরগোশকে টীকা দিতে হবে।

সালমোনেল্লেসিস: সালমোনেল্লা টাইফিমুরিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ। এই রোগে খরগোশের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও পাতলা পায়খানা হয়। গর্ভবতী খরগোশের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এই রোগে খরগোশের মৃত্যুহার অনেক বেশী।

চিকিৎসা: এনরোফ্লক্সাসিন বা সেফালোক্সিন বা সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামক আন্টিবায়োটিক খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়৷

প্রতিরোধ ব্যবস্থা: খরগোশের খামার পরিষ্কার রাখতে হবে। দুষিত জল বা খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। মৃত খরগোশেকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। খরগোশের খামারটিকে ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন: খরগোশের আদ্যোপান্ত
খরগোশের গোশত খাওয়ার বিধান
খরগোশ: শখ পূরণের পাশপাাশি আয়

পরজীবী ঘটিত রোগ: হেপাটিক কক্সিডিওসিস আইমেরিয়া স্টাইডি নামক পরজীবী এই রোগের কারণ৷ সাধারণত কম বয়স্ক খরগোশের এই রোগ হয়।

চিকিৎসা: সালফাকুইনক্সালিন ডেরিভেটিভ এই রোগের খুব ভাল ঔষধ। খাদ্যে শতকরা ০.০২৫ ভাগ হিসাবে ও পানীয় জলের শতকরা ০.০৪ ভাগ হিসাবে এই ঔষধ খরগোশটিকে খাওয়ালে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।

ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিস: আইমেরিয়া সিকিওলা, আইমেরিয়া ফ্লাভেসেনস, আইমেরিয়া ইন্টেসটিনালিস, আইমেরিয়া ইরেসিডুয়া, আইমেরিয়া ম্যাগনা, আইমেরিয়া মোডিয়া, আইমেরিয়া পারফোরানস, আইমেরিয় পিরিফর্মিস- এই আটটি প্রজাতির আইমেরিয়া ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিসের কারণ।

লক্ষণ: এই রোগের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ হল পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসবে, ক্ষুধামন্দাভাব, পেট ফুলে থাকবে এবং চকলেট রঙের মলত্যাগ করবে।