চোখ ওঠা রোগ: কারণ ও প্রতিকার

এস. এম তৌফিক।।

চোখ ওঠা (Eyes raised)— চোখের একটি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। কনজাংটিভা (Conjunctiva) নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা রোগ বলা হয়। চোখের সাদা অংশ একটি পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে— যার নাম কনজাংটিভা। এই কনজাংটিভায় যখন সংক্রমণ বা প্রদাহ হয়, তখন এটি লালচে হয়। এর সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জির কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত চোখ কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। তবে চোখ ওঠা রোগী মূলত সে তার নিজের জন্য সমস্যা নয়, বরং অন্যের জন্য সমস্যা। কারও চোখ ওঠা হয়তো তিন দিনে ভালো হয়ে যায়, কারোর আবার ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে। সেটা নির্ভর করে কার কী ধরনের ভাইরাস আক্রান্ত করেছে এবং সেই রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন তার উপর।

চোখ ওঠা যেভাবে ছড়ায়: চোখে ভাইরাস দিয়ে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই অশ্রু মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে। এ জন্যই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা ভালো।

চোখ ওঠার লক্ষণ: চোখ জ্বালাপোড়া করে। চোখের ভেতর অস্বস্থি ও সামান্য ব্যাথা হয়। রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয় ও অতিমাত্রায় পানি পড়ে। চোখ লাল হয়ে ফুলে উঠে। ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে। চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে থাকে ও হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়। সাধারণত ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো কমে আসে। কিন্তু দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। মণি বা কর্নিয়াতে সাদা দাগ পড়ে যায়। খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না।

চোখ ওঠা রোগ প্রতিরোধ: ধুলাবালি, আগুন-আলো-রোদে কম যাওয়া, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া, পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা, চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা, টিভি না দেখা।

চোখ উঠলে করণীয়

  • চোখের পানি বা ময়লা মোছার জন্য আলাদা তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
  • পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • অপরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করা যাবে না
  • কালো চশমা পরা যেতে পারে, যাতে বাইরের ধুলাবালু বা বাহ্যিক আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • বাইরের পানি দিয়ে ঝাপটা দেওয়া যাবে না।
  • চোখের পাতা বেশি ফুলে গেলে বরফ লাগানো যেতে পারে।
  • হাত না ধুয়ে যখন-তখন চোখ ঘষা বা চুলকানো যাবে না।
  • চোখ ওঠা শিশুদের আলাদা বিছানায় শোয়াতে হবে।

চোখ ওঠা রোগের চিকিৎসা: ভাইরাসজনিত চোখ উঠা স্বাভাবিকভাবে ৭ দিনের মধ্যে সেড়ে যেতে পারে। তবে ব্যাতিক্রম হতে পারে। তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে চোখ উঠা সমস্যা দেখা দিলে কিছু এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।