ছোটদের ডেঙ্গু জ্বর অভিভাবকদের করণীয়

ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার

সাধারণভাবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ বড়দের মতোই হয়ে থাকে। শিশুর শরীরে মাঝারি বা তীব্র মাত্রার জ্বর এক থেকে পাঁচ দিন থাকে। জ্বরের সঙ্গে দেখা দেয় ক্ষুধামান্দ্য ও বমি বমি ভাব। অনেক সময় শরীরে র‌্যাশ দেখা দিয়ে থাকে। মাথা বা শরীরের ব্যথায় শিশু অযথা কান্নাকাটি বা বিরক্ত করতে থাকে। কখনও কখনও বমি, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে। অনেক সময় হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন– মাড়ি, নাক, চোখের কনজাংটিভায় রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা যায়। পানি আসার কারণে অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে। ফুসফুসে পানি জমে শিশুর কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কিশোরী মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত হতে পারে।

দু-তিন দিন পর জ্বর কমে যাওয়ার পর রোগটি প্রশমিত না হয়ে উল্টো শরীরে শক বা চেতনাহীন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। শুরুতে শিশুর নাড়ির স্পন্দন দ্রুত বাড়তে থাকে। একসময় রক্তচাপ কমে যায়, নাড়ির স্পন্দন তখন অনুভূত হয় না। শিশু শকে চলে যায়। এই শক প্রতিহত করতে না পারলে তা থেকে প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এজন্য শিশু বা বড় যে কোনো রোগীর জ্বর কমে গেলেও নাড়ির স্পন্দন এবং রক্তচাপ ঠিক আছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। মা-বাবা বা অভিভাবকের করণীয় ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত শিশুদের শরীরে তীব্র জ্বর দেখা দেয়। এজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন, স্পঞ্জিং বা হালকা গরম পানিতে শরীর মুছে দেওয়া এবং বেশি বেশি তরল খাবার দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

তরল খাবার, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত, স্যুপ, ডালের পানি ইত্যাদি বেশি করে পান করাতে হবে। প্রস্রাব যথেষ্ট ও ঠিকমতো করছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হলে শিশুকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা উচিত। নিয়মিত নাড়ির স্পন্দন, রক্তচাপ মাপা জরুরি। শিশুর রক্তচাপ মাপার জন্য নির্দিষ্ট মাপের ব্লাড প্রেশার কাফ ব্যবহার করতে হবে। এজন্য নিকটস্থ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিন।

শিশুর জ্বরের সঙ্গে রোগসংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ার আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং তাঁর নির্দেশে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাবেন। কোনো শিশুর জ্বর পাঁচ-ছয় দিন পার হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গুর উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাবেন। ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি পাঁচ-ছয় দিন আগে ধরা পড়ে না। এজন্য আগেভাগে অ্যান্টিবডি টেস্ট করার দরকার নেই। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে হবে। জ্বর কমে গেলেও, অর্থাৎ ষষ্ঠ দিন থেকে নিশ্চিন্ত না হয়ে বরং আরও নিবিড়ভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

ডেঙ্গু যখন চিন্তার কারণ শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে যেমন– চামড়ার নিচে রক্ত জমলে, দাঁতের মাড়ি, নাক থেকে, বমির সঙ্গে ইত্যাদি। পায়খানার সময় প্রতিবারই খেয়াল করতে হবে। কারণ, কালচে পায়খানা রক্তক্ষরণের একটা লক্ষণ। হঠাৎ শিশুর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলে। প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে। শ্বাসকষ্ট হলে বা পেটে পানি জমলে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে। জন্ডিস দেখা দিলে। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা বা বমি হলে। শিশু অচেতন হয়ে পড়লে। শরীরে খিঁচুনি দেখা দিলে। এ সময় শিশুদের মশার কামড় থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।


লেখক : অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল