জিডি কি ও কেন করে; জিডি করতে কী কী লাগে?

শ্রী লোকনাথ মন্ডল।।

আমাদের দেশে কেউ থানার গেইটে পা রাখুক আর না রাখুক, জীবনে একবার হলেও ‘জিডি’ শব্দটি শুনেছে। জিডি যার পূর্ণরূপ ‘জেনারেল ডায়েরী’ বাংলায় যাকে ‘সাধারণ ডায়েরী’ বলেই আমরা জানি। আমাদের আইনগত জটিলতা এড়ানো কিংবা নিরাপত্তার জন্য জিডি বা সাধারণ ডায়েরী আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। এই লেখায় আমরা জিডি কী, জিডির প্রয়োজনীয়তা, জিডি কিভাবে করতে হয় এবং জিডির অপব্যবহারসহ সর্বোপরি জিডি সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা দেওয়া চেষ্টা করবো। আশা করি লেখার শেষে জিডি সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।

জিডি কী?
প্রথমেই বলেছি জিডির পূর্ণরূপ জেনারেল ডায়েরী (General Diary), যাকে আমরা বাংলায় “সাধারণ ডায়েরী” বলি। সাধারণ ডায়েরী নামে সাধারণ হলেও এর কার্যক্ষমতা অসাধারণ। একটি সাধারণ ডায়েরীর বদৌলতে আপনার জীবন যে কোন ধরণের সমস্যায় পড়তে পারে এবং বড় ধরণের বিপদ হতে সহজেই বেঁচে যেতে পারেন। সাধারণ ডায়েরীর মাধ্যমে আমরা কিছু তথ্য স্থানীয় থানায় অথবা ঘটনা স্থলের অধীনে থাকা থানা/পুলিশ স্টেশনে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি।

জিডির প্রকারভেদ
সাধারণ ডায়েরী প্রধানত দুই ধরণের হয়ে থাকে। এক. আমাদের নিরাপত্তা বিধান করা দুই. হারানো জিনিসের তথ্য সংরক্ষণ করা। এগুলো সম্পর্কে হালকা-পাতলা আলোচনা করা যাক।
১. নিরাপত্তা বিধান করা: মূলত আইনী বিধান অনুযায়ী অধর্তব্য অপরাধ বা প্রাণ নাশ করার হুমকি ধামকি পেলে নিকটস্থ থানায় আমরা একটি সাধারণ ডায়েরী বা জিডি করে রাখতে পারি। যার দরুণ ‍উক্ত জিডির কল্যাণে হুমকি দাতা আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে অথবা তার হুমকি দাতার দ্বারা ক্ষতি সাধন হয়ে সহজেই আইন অনুযায়ী বিচার লাভ করতে পারি।
২. হারানো জিনিসের তথ্য সংরক্ষণ: জিডি বলতে আমাদের বড় একটা অংশ কেবল হারানোকেই বুঝি। যার কারণ হলো আমাদের কিছু হারানো গেলেই আমরা জিডি করি বা কাউকে জিডি করার পরামর্শ দেই। অর্থাৎ কিছু হারানো গেলে, তা হতে পারে কোন ডকুমেন্টস, গাড়ি, মোবাইল, সিম, কিংবা ল্যাপটপসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদী।

জিডির প্রয়োজনীতা বা জিডি করা কেনো প্রয়োজন?
পূর্বপাঠ থেকে আমরা জিডি সম্পর্কে জানার পরে এটা প্রয়োজনীতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিজে নিজেই বুঝতে পেরেছেন আশা করি। এখানে আমরা জিডি বা সাধারণ ডায়েরী আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আমাদের জীবনে প্রতিটা তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তথ্যের বদৌলতে যে কোন কিছু করা যেতে পারে। তাই তথ্য সংরক্ষণ করা আমাদের অবশ্যই দরকার। আমাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি যদি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়, তখন আমাদের কেমন ক্ষতি হয় তা কেবল ভুক্তভোগী ই একমাত্র বলতে পারবেন। ফোন হারানোটা আমাদের জন্য নিসন্দেহে বড় ধরণের ক্ষতি। কিন্তু কেউ যদি আপনার ফোন অথবা আপনার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে কেউ কোন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে ফেললো এবং আপনি আপনার ফোন চুরি হওয়ার পরে কোন জিডি করেননি এমনকি সিমটি ও রিপ্লেস করেননি। তখন কী হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর বর্তমান সময়ে আমাদের অনীহা এবং অসাবধানতার জন্য আমরা কোন অপরাধ না করেও দোষী হয়ে যাচ্ছি, পড়তে হচ্ছে নানা আইনী জটিলটায়। সুতরাং জিডি করা যে আমাদের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলার কোন অবকাশ নেই। শুধু মোবাইল ফোনই না, আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র, ব্যাংকের চেক, ডেলিভারী স্লীপসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস হারিয়ে গেলে সর্বপ্রথম কাজ হয়ে থানায় এসে জিডি করা এবং তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা।

জিডি কীভাবে করতে হয়?
জিডির গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সাম্যক ধারণ পেয়েছি আশা করি। এবার আসা যাক আমরা কিভাবে জিডি করতে হয় সেটাতে একটু চোখ বুলিয়ে নেই। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা থানা-পুলিশের নাম শুনলেই ভয় পান, হাটু কাঁপে। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের তাদের আর থানায় যাওয়া লাগে না জিডি করার জন্য, ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। একটু মজা করলাম, মন খারাপ করবেন না। পুলিশ আমাদের বন্ধু(!), আমাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকেন তারা। তাই কোন অপরাধ না করলে তাদের ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই। যাই হোক এবার আসল কথায় আসি।

বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি থানায় অনলইনে জিডি করার সুবিধা রয়েছে। তাই বাসায় বসে নিজের স্মার্ট ফোন দিয়ে সহজেই একটি একাউন্ট খুলে ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে জিডি করতে পারবেন। কিভাবে করবেন তা ধাপে ধাপে নিচে বলে দিচ্ছি।

১. প্রথমে গুগল প্লে-স্টোর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন জিডি নামে যে এপস রয়েছে সেটা ডাউনলোড করে নিতে হবে। এখানে মোট দুইটি এপস রয়েছে। আপনার দুইটি এপসেরই দরকার।
২.প্রথম এপসটি ইন্সটল হওয়ার পরে নির্দেশনা মতো নিজের মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র ও লাইভ ছবির মাধ্যমে একাউন্ট ওপেন করে নিবেন। এর সেই এপ্লেকেশনের নির্দেশনা অনুসারে আপনার কাঙ্খিত বিষয়ের জিডি ঘরে বসেই করে নিতে পারেন।

জিডির অপব্যহার ও সচেতনতা
জিডি বা সাধারণ ডায়েরী মূলত আমাদের কল্যাণের জন্য। কিন্তু এর অপব্যবহার বা শুধু শুধু জিডি করা কিংবা কাউকে হয়রানী করতেও জিডি করা হয়ে থাকে। তাই আমাদের প্রতিটা তথ্যের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি এবং নিজেদের স্পর্শকাতর তথ্য যতটা সম্ভব সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা উচিত।

শেষ কথা
এই আলোচনা থেকে আমরা জিডি সম্পর্কে একটি সাম্যক ধারণা পেয়েছি আশা করি। যে কোন হয়রানী কিংবা আইনী জটিলতা এড়াতে আমাদের জিডি করা উচিত। জিডি করা কোন ঝামেলার কাজ নয়। বর্তমানে পুলিশ সদস্যগণ আন্তরিকতার সাথে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেন। তাই কোন বিষয়ে আমাদের জিডি করার দরকার হলে নিশ্চিতে জিডি করবো। বর্তমানে জিডি করার জন্য থানায় কোন টাকা পয়সা দেয়া লাগে না। সুতরাং নিজে সচেতন হোন, কোন ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনে আইনী সহয়তা লাভ করুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, বিএসএস ২য় বর্ষ (ডিগ্রি পাস কোর্স)
সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
Email: slmmithun058@gmail.com