ডায়রিয়ার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়

এস. এম তৌফিক।।

ডায়রিয়া— প্রতি দিন কমপক্ষে তিনবার পাতলা বা তরল মলত্যাগ করার ফলে যে রোগ হয় তাকে বোঝায়। এটা প্রায়শ কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং এর ফলে অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

গরম বাড়লেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কখনো কখনো হাসপাতালে রুগি জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে যায়। ডায়রিয়ায় ঠিক মতো চিকিৎসা না দিলে রুগি মারাও যেতে পারে। তাই একে কখনোই হালকা ভাবে নেয়া উচিত না। পাতলা পায়খানা বেশি হলে ডাক্তার দেখানো উচিত। সুস্থতার জন্য ডায়রিয়া নিতে বেশ কিছু ব্যাপারে জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উদরাময় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণের একটি উপসর্গ। এর কারণ হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস আর পরজীবী। অবশ্য, স্বাস্থ্যের অন্যান্য কারণেও পাতলা মল হতে পারে। উদরাময় রোগে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সের ৫০০,০০০ শিশুর মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বে এটি শিশু মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। প্রতি দিন উদরাময় রোগে ২০০০ শিশুর মৃত্যু হয় যা ম্যালেরিয়া, হাম এবং এ-আই-ডি-এস রোগে মোট শিশু মৃত্যুর চেয়েও বেশি। তীব্র উদরাময় কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। এই রোগের ফলে দেহের তরল পদার্থ নির্গত হয়ে জল-বিয়োজন হয়, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে, মৃত্যুও হতে পারে।

ডায়রিয়ার কারণ:

১. ডায়রিয়া হবার প্রধান কারণ হল পাচনতন্ত্রে প্রয়জনের থেকে বেশি তরল জমা হওয়া। তবে অনেক সময় পাচনতন্ত্রের দ্বারা তরল পদার্থ ঠিক ভাবে অপসারিত না হলে কিংবা পাচনতন্ত্রের দ্বারা মল খুব দ্রুত পরিমাণে বের হলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।

২. কখনও কখনও ডায়রিয়া জীবাণু দ্বারা সংকমণের জন্যও হতে পারে।সংক্রামিত ব্যাকটেরিয়া বা বিষাক্ত ইত্যাদি সংক্রমণ হতে পারে। কখনও কখনকোন রকম চিন্তা বা ভয়ের কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। এই ধরণের ডাইরিয়াকে মূলত ক্ষণিক বা দীর্ঘস্থায়ী ডাইরিয়া বলে।

৩. ডায়রিয়া বা পাতলা মল হবার অন্যান্য কারণ গুলি হল নানান ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক, পেটের রোগ, খাদ্য সংক্রমণ, এলার্জি, অ্যালকোহল খাওয়া, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া ইত্যাদি।

ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে পানি। ঢাকার যেসব এলাকা থেকে রোগী বেশি আসছে সেখানে কলের পানিতে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করছেন আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর।

গরমে আমরা প্রায়ই রাস্তার শরবত খাই। তার পানি কেমন, যে বরফ দেয়া হয় সেটা কেমন পানি দিয়ে ও কোন পরিবেশে বানানো হয়েছে, যিনি বানাচ্ছেন তিনি কি সুস্থ আছেন— এসব বিষয় আমরা কিছুই জানি না। কখনো খোঁজও নেই নি। অথচ ডায়রিয়ার জীবানু ছড়ার মাধ্যম এটি। আমরা যে পানি খাই। সে পানির পাইপ ফেটে ময়লা পানি তাতে যুক্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে খাওয়া, পারত পক্ষে রাস্তার খাবার না খাওয়া।

ডায়রিয়ার লক্ষণ:

  • ঘন ঘন পায়খানা পাওয়া মাঝে মাঝে পায়খানার সাথে রক্ত বের হওয়া পেটে ব্যথা।
  • জ্বর সঙ্গে শীত অনুভব হওয়া।
  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পিপাসা পাওয়া।
  • পেটে ব্যাঘাত অনুভব করা।
  • হঠাৎ পেটেরনীচের অংশে খুব গুরুতর ব্যথা অনুভব করা।

ডায়রিয়ার চিকিৎসা

  • লেবুর সাহায্যে ORS এর বানিয়ে আপনি বাড়িতে খেতে পারেন।
  • কাঁচা পেঁপেকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে তাতে তিন থেকে চার কাপ পানি মিশিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য ফোঁটান। এরপর তা দিনে ৩-৪ বার পান করুন।
  • সাবুদানা পেটের পাচনতন্ত্রকে শক্তি প্রদান করে। সাবুদানাকে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিনে ৪-৫ বার খেলে আপনি এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
  • সরিষা বীজকে কয়েক ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে রাখুন এবং সেই পানি পান করুন। এই পদ্ধতি পাতলা পায়খানা বন্ধ করার একটি আদর্শ উপায়।
  • বেদানা বা ডালিম ডালিমের দানাগুলি চিবিয়ে খেলে পাতলা মল বন্ধ হতে পারে। আপনার যদি ডালিমের দানা খাওয়ায় পছন্দ না হয় তাহলে আপনি এটির রস করে পান করতে পারেন।
  • লাউ এর রস ডাইরিয়াতে শরীর থেকে জল কমে যাওয়ার ভয় সবচেয়ে বেশি থাকে। আপনি যদি শরীর থেকে জলের পরিমাণ না কমাতে চান তাহলে লাউ এর রস খেতে পারেন। সামান্য পরিমাণ গোলমরিচ এবং লবণ দিয়ে আপনি এই রসকে আপনি সুস্বাদু বানাতে পারেন।
  • মেথি জীবাণুকে নাশ করতে সাহায্য করে। এই কারণে এক বা দুটি চামচ মেথিগুঁড়া এক গ্লাস জলে মিশিয়ে পান করুন। এতে ডায়রিয়া থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন।
  • স্টার্চ‌ জাতীয় খাবার স্টার্চ‌ খাদ্যকে হজম হতে সাহায্য করে। তাই ডায়রিয়া হলে স্টার্চ‌জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এর জন্য আপনি চাল, সেদ্ধ আলু বা গাজর খেতে পারেন।
  • ১ চামচ চা পাতা বেটে খেলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে আরাম পাবেন। যদি কোন ছোট বাচ্চাকে এটি দিতে হয় তাহলে চা পাতার সাথে জল মিশিয়ে দিতে পারেন।

লেখক: ব্যাচেলর অফ ফার্মেসী,
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়।