তথ্য কী এবং আমাদের যাপিত জীবনে তথ্যের গুরুত্ব

শ্রী লোকনাথ মন্ডল।।

তথ্য আমাদের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অবজেক্ট। অবশ্য তথ্যকে শুধু অবজেক্ট বললে অবজ্ঞা করা হবে। এক কথায় পুরো পৃথিবী টিকে আছে এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আমাদের জীবন ধারণ, সভ্যতার পথ পরিক্রমায় আধুনিকায়ণ এর পথে ধাবিত হওয়া সব কিছুর মূলে আছে তথ্য। তথ্য ছাড়া আমরা অন্ধ, তথ্য ছাড়া আমরা বলতে পারবো না, শুনতে পারবো না। তথ্য এতো গুরুত্বপূর্ণ কেনো? তথ্য আসলে কী? তথ্যের দ্বারা আমাদের কী লাভ কিংবা তথ্যের ক্ষতিকর দিকটিই বা কী? এখানে আমরা তথ্যের বিপুল ভান্ডার থেকে তথ্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

তথ্য কী?
সহজভাবে বললে, আমরা যা শুনি, যা দেখি, যা জ্ঞান অর্জন করি সেটাই তথ্য। তথ্যে ধরণের উপর ভিত্তি করে আমরা যে কোন পদক্ষেপ এর পরবর্তী ধাপে পা বাড়াই। সুতরাং আমরা বলতে পারি “তথ্য হল সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক, নীতি নির্ধারক, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, ব্যবস্থাপক ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন”।

তথ্যের ব্যাপকতা
আমাদের গোটা দুনিয়াটা একটি তথ্য ভান্ডার, এবং আমরা হলাম তথ্যের বাহক। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আমরা তথ্য বয়ে বেড়াই। তথ্য আমাদের জীবনকে সহজ এবং সুন্দর করতে সহায়তা করে। একজন মানুষের কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে সে তত বেশি সমৃদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে। একজন শিক্ষার্থীর কাছে যত বেশি ইতিবাচক তথ্য থাকবে সে তত বেশি এগিয়ে থাকবে।

আমাদের উপর তথ্যের প্রভাব
এক. ‘তথ্য প্রাপ্তি’ আমাদের উপর শক্তিশালী/ট্রান্সফর্মিং প্রভাব ফেলে। তথ্য প্রাপ্তির ফলে আমাদের মনোভাবের পরিবর্তন সাধিত হয় কারণ এটি প্রাপকের ব্যক্তিগত জ্ঞানের ক্ষমতা বাড়ায়।
দুই. তথ্য নতুন তথ্য তৈরি করে। এটি বিদ্যমান জ্ঞান/তথ্য নতুন তথ্য তৈরি করতে সাহায্য করে; নতুন জ্ঞান; নতুন তত্ত্ব, ইত্যাদি।
তিন. বিজ্ঞানী এবং পণ্ডিতরা একটি তথ্য থেকে তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনীতে তথ্য ব্যবহার করেন। উদাহণ হিসেবে আমরা দেখতে পারি, গবেষণা প্রতিবেদন, থিসিস/ডিসার্টেশন, বই, জার্নাল নিবন্ধ, সেমিনার পেপার ইত্যাদি।

চার. ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, ইত্যাদির মতো বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে তথ্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একই সাথে তারা তাদের কাজ আরও বেশি কার্যকর এবং দক্ষতা অর্জন করার জন্য তথ্য অর্জন করে এবং প্রয়োগ করে।
পাঁচ. তথ্য জনশক্তি, উপকরণ, উৎপাদন, অর্থ, বিপণন ইত্যাদির উন্নত ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। আধুনিকায়নে তথ্য আমাদের সহায়তা করে থাকে।
ছয়. তথ্য গবেষণার নকল এড়াতে সাহায্য করে। তথ্য ব্যবহারকারীদের, বিশেষ করে পণ্ডিতদের চিন্তা প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে।
সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি তথ্য আমাদের জীবনে কতভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

ইতিবাচক তথ্য বনাম নেতিবাচক তথ্য
তথ্যের উপর ভিত্তি করে যেমন আমাদের মানব সমাজ টিকে আছে, তেমনি করে নকল, আংশিক কিংবা ভুয়া তথ্য আমাদের আমাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর বর্তমান অবস্থা দেখতে পারি। যেখানে ভুয়া সংবাদ প্রচার অথবা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করা হয়। কোথাও কোথাও মানুষের জীবন বিপন্ন করতেও ভুয়া কিংবা গুজব দায়ী থাকে। তবে তথ্যে সঠিক ব্যবহার আমাদের জীবনকে আলোকিত, সুন্দর এবং সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। এই ধরণের উদাহরণ ও আমাদের আশেপাশের অসংখ্য রয়েছে, যেখানে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে বিপর্যস্ত মানুষ সহায়তা কিংবা সেবা পাচ্ছে।

শেষ কথা
তথ্য আমাদের জীবনের সাথে আঙ্গাআঙ্গিক ভাবে জড়িত আছে। তাই আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ এবং সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে তথ্য অর্জন করা, কিংবা জ্ঞান আহরণ করার কোন বিকল্প নেই। তবে আমাদের অর্জিত তথ্য হতে হবে সঠিক এবং গুজবমুক্ত। যে তথ্যের দ্বারা সভ্যতার বিনষ্ট হওয়া ঝুকি থাকে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

শিক্ষার্থী, বিএসএস ১ম বর্ষ (ডিগ্রি পাস কোর্স)
সরকারি তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।