১৬০৮ হতে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত রাজবাড়ীটি ছিল বৃহৎ দিনাজপুর জেলার ঐশ্বর্যের প্রতীক। শুরুর দিকে রাজবাড়ীর অবয়ব এমন না থাকলেও ধীরে ধীরে রাজবাড়ী গড়ে ওঠে তিলোত্তমা হিসেবে।
রাজা রামনাথ (১৭২২-৬০) প্রায় বিয়াল্লিশ বৎসর দিনাজপুরের মহারাজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার শাসনামলে বাংলায় বর্গীদের আক্রমণ ঘটে । বর্গীদের ভয়ে লোকেরা ভাগীরথীর পূর্বদিকে পালিয়ে যেতে লাগল। ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রতিবছর বর্গীরা বাংলায় এসে গ্রাম ও নগর আক্রমণ করে লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অত্যাচার ও উৎপীড়ন চালিয়েছিল বাংলার মানুষের উপরে।
আর বরেন্দ্রভূমিতে বর্গী আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন দিনাজপুরের রাজা রামনাথ রায় । তিনি রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিরক্ষার জন্য ১০টি কামান নিযুক্ত করেছিলেন বলে কথিত রয়েছে।
ফলে বর্গীরা দিনাজপুর, মালদহ, রাজশাহী, রংপুরে তেমন কোনও তৎপরতা চালাতে অক্ষম হলে এ অঞ্চলগুলোতে বর্গী অত্যাচারের বীভৎসতা থেকে রক্ষা পায় ।
১৯৫১সালে জমিদারী অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবায়নের ফলে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ হয়।তখন হতে রাজবাড়ীটি পরিত্যাক্ত হতে শুরু করে। সর্বশেষ জমিদার জগদীশনাথ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পর হতে রাজবাড়ীর জৌলুস কমতে থাকে।
এটি বর্তমানে বিলুপ্ত জমিদারী কীর্তির ধ্বংসাবশেষ মাত্র। রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনাসমূহ হলোঃ আয়নামহল, রাণী মহল, কুমার মহল, আটচালা ঘর, লক্ষ্মী ঘর, আতুর ঘর, রাণী পুকুর, চাঁপা তলার দিঘী, ঠাকুর বাড়ী, কালীয়া জিউ মন্দির।
রাজবাড়ি প্রধানত তিনটি মহল বা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত- আয়না মহল, রাণি মহল ও ঠাকুরবাটি মহল। পাশাপাশি আরো কিছু অপ্রধান স্থাপনা আছে। যা জমিদার পরিবারের বিভিন্ন রাজা ও উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠিত।
রাজবাড়ির সীমানায় আরো কিছু মন্দির, বিশ্রামাগার, দাতব্য চিকিৎসালয়, পানির ট্যাঙ্ক ও আমলাদের বাসস্থান স্থাপিত হয়।
রাজবাড়ির ভূমির মোট আয়তন ১৬.৪১ একর যার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটি বৃহৎ পানির চৌবাচ্চা/ট্যাঙ্ক, মঠ, বাগান, কাঁচারী ঘর, টেনিস কোর্ট ও কুমারের বাড়ি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও এর মুল অংশে দুইটি পুকুর রয়েছে, যার একটি রানিপুকুর নামে পরিচিত। এবং রাজবাড়ির পিছনে আরো দুইটি বিশালাকৃতির পুকুরের একটি পদ্মপুকুর ও অপরটি সুখসাগর নামে পরিচিত । রাজবাড়ির ‘হিরাবাগান’নামে একটি মাঠ রয়েছে। বর্তমানে রাজবাড়িটিকে দুইটি অংশে ভাগ করা হয়েছে যার সামনের অংশ অর্থাৎ মন্দির অংশে প্রতিবছর ধর্মীয় ভাবভঙ্গীমায় কান্তজিওঁ ও দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। এ অংশটি ‘রাজদেবত্তর এস্টেট’ নামে মন্দির কমিটির তত্বাবধানে রয়েছে। অপর অংশটি অর্থ্যাৎ আয়নামহল ও রানিমহল ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় রয়েছে যেখানে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য এখনও দেখা যায়।
কিভাবে যাওয়া যায়:
দিনাজপুর রাজবাড়ী দিনাজপুর শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড মোড় হতে পঞ্চগড় ঠাকুরগাওগামী মহাসড়কের চিরিরবন্দর সংযোগ সড়কের মোড় হতে ১ কিঃমিঃ অটোরিকশা যোগে।
