স্তন্যপায়ী বৃক্ষচারি জীব স্লথ। এদের সচরাচর মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে দেখা যায়। ইংরেজি sloth কথাটি এসেছে slouthe থেকে যার অর্থ অলস বা ধীর। এই প্রাণীরা অনেক ধীরে নড়াচড়া ও চলাফেরা করে তাই এদের নাম দেয়া হয়েছে স্লথ বা অলস।
ছয় প্রকার স্লথকে দু’টো শ্রেণীতে ভাগ করা হয় — দুই আঙুল বিশিষ্ট স্লথ এবং তিন আঙুল বিশিষ্ট স্লথ । তবে বেশির ভাগ স্লথের পায়ে তিনটি করে আঙুল দেখা যায়। দুই প্রজাতির স্লথের চেহারা প্রায় একই। স্লথ ২৪ থেকে ৩১ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে এবং প্রজাতির উপর নির্ভর করে, ওজনে ৩ থেকে ৮ কেজি হতে পারে। মুখের উপরে ১০টি এবং নিচের পাটিতে ৮টি দাঁত থাকে এদের।
এদের মাথা গোলাকার, চোখ বিষাদ মাখা, ছোট কান এবং লেজ ছোট ও মোটা। স্লথ তাদের মাথা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাতে সক্ষম। তাই তারা চতুর্দিকে নজর রাখতে পারে। দুই আঙুল ওয়ালা স্লথ সামান্য বড় হয়, কিন্তু এদের প্রকৃতি তিন আঙুল ওয়ালা স্লথের মতোই, যারা গাছের বিভিন্ন খাঁজে বসে থাকে। তিন আঙুল ওয়ালা স্লথের মুখের বর্ণ এমনভাবে সাজানো যে দেখে মনে হয় এরা সবসময় হাসছে। তাদের ঘাড়ে দুটি বাড়তি কশেরুকা থাকে যা তাদের মাথা প্রায় বৃত্তাকারে ঘোরাতে সাহায্য করে।
স্লথরা সচরাচর তৃণভোজী হয়ে থাকে। গাছের কচি পাতা, কুড়ি, কচি ডাল এবং ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে কিছু কিছু প্রজাতির স্লথ ছোট ছোট পোকামাকড় এবং ছোট আকারের সরীসৃপ খায়। এই প্রাণীরা অসাধারন অভিযোজন ক্ষমতার প্রদর্শন করেছে। এরা লতা পাতা এবং কচি ডালপালা খেয়ে অভ্যস্ত, তবে এগুলো হজম করে শক্তির উৎপাদন করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া এবং এই সমস্ত তৃণ জাতীয় খাদ্য থেকে খুবই কম শক্তি পাওয়া যায়। তাই স্লথরা অত্যন্ত ধীরে নড়াচড়া ও চলাফেরা করে শক্তির অপচয় রোধ করে।
তৃণ জাতীয় খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তি পেতে এদের পাকস্থলি বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছে। বিশাল আকৃতির একাধিক প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলিতে খাদ্য খুব ধীরে ধীরে হয় যার ফলে খাদ্য থেকে সমস্ত খাদ্যগুন বের করে নেওয়া সম্ভব হয়। একবার খাদ্য গ্রহণ করার পর হজম হতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। এই পরিপাক প্রনালীর জন্য এদের পাকস্থলি শরীরের দুই তৃতীয়াংশ যায়গা দখল করে থাকে।
স্লথের ব্যাপারে সবচেয়ে মজার এবং অবাক করা বিষয় জানেন কি? একবারে ৪০ মিনিট নিশ্বাস না নিয়েই বাঁচতে পারে এরা। মাঝে মাঝে পানিতে নেমে সময় কাটায় এরা। মাছ ধরা সহ এমনিতেই ঘুরে বেড়ানো এদের কিছু না করার মধ্যে একটি কাজ বলা যায়। ডাঙার তুলনায় পানিতে চলতে ওস্তাদ স্লথরা। পানিতে খুব তাড়াতাড়ি সাঁতার কাটতে পারে এরা। ডাঙার তুলনায় পানির তলায় তাদের গতি তিন গুণ দ্রুত হয়। তবে পানির নিচে শ্বাসকার্য চালানোর মতো শারীরিক গঠন ওদের নেই। এজন্যই দম আটকে রাখে পানির নিচে। অন্তত ৪০ মিনিট পর্যন্ত দম বন্ধ করে থাকতে পারে স্লথ। নিশ্বাস নেয় না। শুধু তাই নয়, সেই সময় তাদের হৃদস্পন্দন কমতে কমতে প্রায় তলানিতে এসে ঠেকে। স্বাভাবিকের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কমে যায় স্লথের হৃদস্পন্দনের গতি।
বাজ জাতীয় শিকারি পাখির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে ও নড়াচড়া করে না বললেই চলে। এই প্রাণীটি এতোই ঘুম প্রিয় যে এরা দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়। এদের দেহ ঘন লোমে আবৃত থাকে এই কারণে ক্রান্তীয় বর্ষাবনের ভেজা আবহাওয়ার ফলে এদের শরীরে মথ, গুবরে পোকা, কৃমি, ফাংগি এবং উকুন বাসা বাঁধে। স্লথ গাছেই বাস করে এবং গাছ থেকে সহজে নিচে নামে না। সপ্তাহে মাত্র একবার এরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নিচে নামে।
শিকারির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তীব্রভাবে কামড়িয়ে, চিৎকার করে, থাবা দিয়ে সজোরে আঘাত করে এবং তীক্ষ্ণ চিৎকার করে। স্লথ মায়েরা তাদের বাচ্চার প্রতি যত্নবান। জন্মের পর ৬ মাস তারা মায়ের সঙ্গে লেগে থাকে। গাছের মধ্যে চলাচলের সময় তারা মায়ের পেট আঁকড়ে ধরে রাখে।
স্লথদের শারীরবৃত্তিয় কার্যকলাপ অত্যন্ত ধীরে চলে এবং বিশ্রামের সময় শক্তির অপচয় রোধের করতে এরা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কমিয়ে রাখতে সক্ষম। যদিও দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় বনভূমির বাহিরে এরা বেঁচে থাকতে পারে না তার পরেও অভিযোজনের দিক দিয়ে এদের অনেক সফল প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এদের ছয়টি প্রজাতীর মধ্যে কোনটিই খুব শিঘ্রই বিলুপ্ত হয়ে যাবার কোন সম্ভাবনা নেই।

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।