ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়

এস. এম তৌফিক।।

ব্রণ বা Acne vulgaris বা acne নিয়ে নিয়ে অধিকাংশ মানুষেরই দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে উঠতি বয়সী বা ২০ বছরের আশেপাশের বয়সীদের এ নিয়ে একটু বেশীই চিন্তা করতে দেখা যায়। আজকে আমরা ব্রণ নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ, এর কারণসহ নানদিক তুকে ধরব আপনাদের কাছে।

ব্রণ হলো মানব ত্বকের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগবিশেষ যা বিশেষত লালচে ত্বক, প্যাপ্যুল, নডিউল, পিম্পল, তৈলাক্ত ত্বক, ক্ষতচিহ্ন বা কাটা দাগ ইত্যাদি দেখে চিহ্নিত করা যায়।

ব্রণ কেন হয়?
ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামের একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে, যা ব্রণ নামে পরিচিত। প্রায়ই ব্রণের চারপাশে প্রদাহ হয় এবং লাল হয়ে যায়। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এতে পুঁজ হয়। সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে দাগ থেকে যেতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম, মেকআপ প্রসাধনীর অতিরিক্ত ব্যবহার, মহিলাদের পিরিয়ড, স্টেরয়েড ওষুধ সেবন, হরমোনের প্রভাব বা বংশগত কারণেও হতে পারে।

ব্রণ হলে করণীয়

  • দিনে দু-তিনবার হালকা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। বাইরে থেকে এসেই মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • মেক আপের ক্ষেত্রে তেল ছাড়া ওয়াটার বেসড মেকআপ ব্যবহার করুন এবং মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করুন।
  • রাতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি খান ও পানি পান করুন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। পাশাপাশি প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
  • যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলুন। ব্রণে হাত লাগাবেন না, নখের সাহায্যে খুঁটবেন না।ফাস্টফুড খাবার ও উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।

ব্রণ দূর করার উপায়

শশার রস: শশার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শশার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। কিংবা আইস কিউব করে রেখেও ইউজ করতে পারেন, এতে ওপেন পোরসের প্রবলেমও সল্ভ হবে অনেকটা।

কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো: কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবংচন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। মিশ্রণটি এরপর ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে মুখঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণদূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

আপেল এবং মধু: আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেএরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রঙ হালকা করে। সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি কয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।

তুলসি পাতার রস: ব্রণের জন্য তুলসি পাতার রস খুব উপকারী। কারণ তুলসি পাতায় আছে আয়ূরবেদিক গুণ। শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রণ আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

ডিমের সাদা অংশ: রাতে শোয়ার আগে ডিমের সাদা অংশ ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় ম্যাসেজ করে সারারাত রাখতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এর সাথে লেবুর রস যোগ করা যায়। আপনি এটি আধ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলতে পারেন।

পুদিনা পাতা: অতিরিক্ত গরমের কারণে ত্বকে যেসব ফুসকুড়ি এবং ব্রণ হয় সেগুলো দূর করতেও পুদিনা পাতা উপকারী। টাটকা পুদিনা পাতা বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট এরপর ধুয়ে ফেলুন।

লেখক: ব্যাচেলর অফ ফার্মেসী,
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়।