হাসপাতালে এক্স-রে (রঞ্জনরশ্মি) ছাড়া চিন্তা করা যায় না। আমাদের কাছে এক্স-রে এখন খুব পরিচিত এক নাম। কিন্তু এ এক্স-রে আবিস্কার হয়েছে ভুল থেকে। অবাক হচ্ছেন? ঊনবিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ উইলহেম রন্টজেন। তিনি পরীক্ষাগারে সামান্য ভুল থেকে আবিষ্কার করেন এক বিস্ময়। নিজেই তা বিশ্বাস করতে না পেরে সেই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন, যাতে ভুল সংশোধন হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিবারই ফল আসতে থাকে একই।
একপর্যায়ে তার ধারণা হতে থাকে, তিনি বোধহয় পাগল হয়ে গেছেন। অবশ্য তার এমন ভাবনা অমূলক কিছু নয়। কারণ, তিনি যে রশ্মি আবিষ্কার করেছেন, তা দেহের মাংস ভেদ করে প্রবাহিত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু হাড়ের কারণে তা বারবারই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।
উইলহেম রন্টজেন জার্মানির রাইন প্রদেশের ‘লেনেপ’ অঞ্চলে ১৮৪৫ সালে সাধারণ এক পরিবারে জন্মেছেন। নিজ প্রচেষ্টায় মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৮৬৫ সালে ভর্তি হন ‘ইউট্রেক্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে’। পাঠ্যবিষয় হিসেবে পদার্থবিদ্যা পছন্দের তালিকায় থাকলেও তাতে মন স্থির করতে না পেরে পরে ‘জুরিখ পলিটেকনিকে’ পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হন যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র হিসেবে এবং সেই সময়ের বিখ্যাত প্রশিক্ষক ‘ক্লসিয়াসে’র লেকচারে অংশ নিতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি ‘কুণ্ড’ নামক এক গবেষকের অধীন গবেষণা জীবনের হাতেখড়ি হতে থাকে। ১৮৬৯ সালে উইলহেম গবেষণাজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
উইলহেম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর তার প্রশিক্ষক ‘কুণ্ড’র সঙ্গে পাঁচ বছর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ‘স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়’ তাকে স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তী সময়ে ১৮৮৮ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে ‘উর্জবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে’ যোগ দেন। এখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি তার বিশ্ব কাঁপানো ‘এক্স-রে’ আবিষ্কার করতে সক্ষম হন।
একদিন উইলহেম গবেষণা করছিলেন একটি বায়ুশূন্য টিউব নিয়ে। টিউব থেকে যেন আলো বের হতে না পারে–এ জন্য তিনি তার চারদিকটা কালো কার্ডবোর্ড দিয়ে ঢেকে দেন। টিউবটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালানোর সময় তিনি খেয়াল করেন, দেয়ালে রাখা একটি ‘বেরিয়াম প্লাটিনো-সায়ানাইড’ পর্দায় অদ্ভুত কালো দাগ পড়েছে। এ রকম দাগ পর্দার ওপর শুধু আলো পড়লে সৃষ্টি হতে পারে। কালো কার্ডবোর্ড দিয়ে ঢাকা টিউব থেকে আলো বেরিয়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। তাই এ আলো কোত্থেকে আসছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন তিনি।
ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর উইলহেম নিশ্চিত হন, টিউবটির ভেতর থেকেই কোনো একটা অদৃশ্য আলো বেরিয়ে আসছে। অবাক হয়ে তিনি তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন, পর্দার সামনে হাত মেলে ধরতে। এরপর দেখলেন, দেয়ালে একটি ভৌতিক হাতের দৃশ্য ভেসে উঠেছে। যেখানে হাতের মাংসগুলো স্বচ্ছ হয়ে গেছে, কিন্তু হাড়গুলো স্পষ্ট চিত্রিত। আর আঙুলে পরা আংটির জায়গা গাঢ় কালো রঙের ছায়া দেখা যাচ্ছে। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম ‘রন্টজেনোগ্রাম’। উইলহেম নিজেও বুঝতে পারলেন, তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ রশ্মি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। যে অজ্ঞাত রশ্মির নাম ‘এক্স-রে’।
উইলহেমের আবিষ্কৃত ‘এক্স-রে’তে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে ‘এক্স-রে’ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এক্স-রের ব্যবহারের ক্ষেত্রও বাড়ছে। সব ধরনের এক্স-রে উৎপন্ন হওয়ার মূলনীতি এক হলেও, একেক কাজের জন্য একেকভাবে এক্স-রে উৎপন্ন করা হয়। ১৮৯৫ সালে বিজ্ঞানী উইলহেম যেভাবে বায়ুশূন্য টিউবে বিদ্যুৎপ্রবাহের মাধ্যমে এক্স-রে উৎপন্ন করেন, ১২৭ বছর পর আজও একইভাবে এক্স-রে উৎপন্ন করা হয়।
বিজ্ঞানের উন্নতির কথা বিবেচনা করে, উইলহেম এক্স-রে আবিষ্কারের কপিরাইট বিনা মূল্যে দিয়ে গেছেন। ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন হলে, তিনি সে বছরই পদার্থবিজ্ঞানে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। শেষ বয়সে উইলহেম ভীষণ অর্থকষ্টে ভুগেছেন। ১৯২৩ সালে ৭৭ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। ২০০৪ সালে উইলহেম রন্টজেনকে সম্মানিত করে ‘IUPAC’- কর্তৃক ১১১ নম্বর মৌলিক পদার্থের নাম রাখা হয় ‘রন্টজেনিয়াম’।

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।