মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করেন, মিনার তিন ‘জামরা’ হলো তিন শয়তান কিংবা প্রত্যেক জামরার সঙ্গে একটি করে শয়তান বাঁধা আছে। বরং কিছু মানুষকে এমনও বলতে শোনা যায় যে, প্রথমটি হচ্ছে বড় শয়তান। পরেরটা মেজো শয়তান। তার পরেরটা ছোট শয়তান।
এ জাতীয় ধারণা পোষণ ও নামকরণ কোনোটাই সহিহ নয়। আসলে ‘জামরাত’ আরবি ‘জামরাতুন’ শব্দের বহুবচন। এর অর্থ ছোট ছোট কঙ্কর বা নুড়িপাথর। যেহেতু এসব স্থানে ছোট ছোট কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয় এজন্য এগুলোকে ‘জামরাত’ বলে।
এই নুড়ি বা কঙ্কর নিক্ষেপের প্রেক্ষাপট হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তিনবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। আর তিনবারই হজরত ইবরাহিম (আ.) তাকে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করে প্রতিহত করেছিলেন। অবশেষে তিনি এ মহাপরীক্ষায় কামিয়াব হয়েছেন। যে তিন স্থানে ইবলিস তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেই তিন স্থান নিশানার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে। পরে সেখানে একটি করে খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে যে খুঁটিটি মক্কার সীমানার একেবারেই নিকটবর্তী এবং মসজিদে খাইফ থেকে দূরে অবস্থিত সেটাকে ‘আল জামরাতুল কুবরা’ বা ‘জামরাতুল আকাবা’ বলে। এর পরেরটিকে ‘আল জামরাতুল উসতা’ এবং এর পরেরটিকে ‘আল জামরাতুল উলা’ বা ‘আল জামরাতুল দুনইয়া’ (নিকটতম জামরা) বলে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) সরাসরি শয়তানকেই কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিলেন। বর্তমানে তার অনুসরণে ওইসব স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয়, যেখানে যেখানে শয়তান তাকে বাধা দিয়েছিল আর তিনি কঙ্কর মেরে তাকে প্রতিহত করেছিলেন। হাজিদের কঙ্কর নিক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো মিল্লাতে হানিফ (মিল্লাতে তাওহিদ)-এর ইমাম হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর অনুকরণ এবং তার কাজের হুবহু অনুকরণ।
এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, ওইসব স্থানে খুঁটির আকৃতিতে শয়তানও থাকে না বা ওইসব খুঁটির সঙ্গে শয়তানকে বেঁধেও রাখা হয়নি। কিন্তু যদি আল্লাহর বড়ত্বের প্রতি বিশ্বাস রেখে চিরশত্রু শয়তানের বিরোধিতার সংকল্প নিয়ে জবানে আল্লাহর তাওহিদের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয়, তাহলে সেটা হবে শয়তানের মুখে কালি মেখে তাকে অপদস্থ করা। এর দ্বারা শয়তানের কোমর ভেঙে যায় এবং সে হতাশ হয়। তবে শয়তানকে জুতা ছুড়ে মেরে বা তাকে গালি দেওয়ার মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহর কাছে তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার মাধ্যমে ও তাকে চিরশত্রু ভেবে তার বিরোধিতা করা ও সুন্নত অনুসারে ওইসব স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করার দ্বারাই সে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হয়।
মোট কথা, মিনার ‘জামারাত’ শয়তান নয় এবং শয়তান সেখানে খুঁটির আকৃতিতে উপস্থিতও নয় আর শয়তানকে সেখানে বেঁধেও রাখা হয়নি। বরং আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে সেখানে কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয়। আল্লাহর এ নির্দেশের মধ্যে অনেক হেকমত নিহিত রয়েছে। একটি বড় হেকমত হলো, আল্লাহর ধ্বনি উঁচু করা। তার জিকির জিন্দা করা ও শয়তানকে অপদস্থ করে তার বিরোধিতায় পূর্ণ উজ্জীবিত হওয়া।
