এস. এম তৌফিক।।
ভাদ্র মাসের জোছনার মতো কাজলের জীবনে ছিলো ঝলমলে আলো। হঠাৎ করেই একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো সেই ঝলমলে আলোর চাঁদটাকে। কাজলের সাজানো গোছানো সংসারটা একটা দমকা হাওয়া এসে উল্টোপাল্টা করে ফেললো। কাজলের জীবনের সমস্ত রাস্তা যেন কালো অন্ধকারে ঢেকে গেলো। তবে কি কাজলের জীবনে সুখের প্রদীপ জ্বলবে না!
এক সন্তানকে হারিয়ে অন্য সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মিটাতে মান্নান মিয়া সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। ঘরবাড়িহীন মান্নান মিয়া ও তার অর্ধাঙ্গিনী সেলিনার মাথা গোজার জন্য অবশেষে পেয়েছে একটা সরকারি পরিত্যক্ত পুরোনো একতলা দালান বাড়ি। তাহলে কি মান্নান মিয়া ও তাঁর অর্ধাঙ্গিনী সেলিনা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ঐ পুরোনো বাড়িতে ত্যাগ করবে! নাকি মায়ের নাড়ীর টানে সন্তান ফিরে এসে পুনরায় তাঁদের সুন্দর একটা জীবন দেবে!
নাম ও প্রচ্ছদ কথন
গল্পের সাথে বইয়ের নাম খুব মানানসই এবং সেই সাথে প্রচ্ছদ শিল্পীর প্রচ্ছদটির প্রশংসাযোগ্য কাজ বলেই মনে হয়েছে।
লেখক সম্পর্কে
লেখক নেহেদী হাসানের জন্ম ৯ই ডিসেম্বর। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। লেখক সম্পর্কে বইটির পেছনের ফ্লাপে লেখকের নাম ব্যাতীত তেমন কোনো তথ্য দেয়া নেই।
চরিত্র: কাজল, জয়নাল, জয়নালের মা জাহেরা বানু, মান্নান মিয়া, মান্নান মিয়ার স্ত্রী সেলিনা, কাজলের ভাই সুরুজ ও বোন লতা এবং অন্যান্য।
কাহিনী সংক্ষেপ
গল্পটি মূলত একটি পরিবার এবং তাদের আশেপাশের প্রতিবেশী দু-তিনটি পরিবারের মিলিত গল্প। যে গল্পে কাজল-জয়নালের মধুর ভালোবাসার সংসারের বিপরীতে মান্নান মিয়া-সেলিনা বেগমের দুঃখ-বিষাদে ভরপুর জীবনের নির্মম অবস্থা লক্ষ্যণীয়। তার পাশাপাশি রাসেল-শিরিনের সংসারে মাদকাসক্তির কালো থাবা কিংবা জাহেরা বানুর মত লোকেদের সুদের ব্যবসার মত জঘন্যতম পাপ কাজ ও ফুটে উঠেছে গল্পটিতে। আস্তে আস্তে ঘটনাক্রমে এভাইবেই এগুতো থাকে গল্প।
পাঠ পর্যালোচনা
“ঝাউবনে জোছনা” গল্পটি আমাদের সমাজেরই বাস্তব কিছু চিত্রকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে একটু ভিন্নভাবে। পাঠকের কাছে গল্পটিকে প্রথমদিকে খুবই সাদামাটা একটি বিবাহিত জুগলের বিবাহ পরবর্তী প্রেমের গল্প মনে হলেও আস্তে আস্তে পাঠক যত সামনে এগুতো থাকবে ততই গল্পটিতে পরিবর্তন এবং গভীরতা অনুভব করতে পারবেন এবং গল্পটিতে ঠিক কখন যে মজে যাবেন তা হয়তো নিজেও বুঝতে পারবেন না। একজন লেখকের লেখার ক্ষেত্রে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান বলে আমি মনে করি। কারণ, লেখকের মধ্যে তার পাঠককে ধরে রাখার মত গুণ থাকা খুবই দারুণ একটি বিষয়। এ বইটির ক্ষেত্রে আমি বিশেষভাবে বইটির শেষ অংশের প্রশংসা করেই বলতে চাই যে, আলাদা আলাদা পরিবারের গল্পগুলোকে একত্রিত করে খুব সুন্দরভাবে একটা রূপদান করেছেন লেখক মেহেদী হাসান।
প্রিয় লাইন:
- যেন স্বামীর প্রশংসা পেলে মেয়েরা পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ হয়ে যায়।
- সন্তান যত বড় অপরাধ করুক না কেন, বাবা-মায়ের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তাদের সন্তান।
- মনের মধ্যে দুঃখ পুষে রেখেও মানুষটা হাসছে। এই হাসি যেন লেগে আছে অনেক বছর।
- গোসল শেষে ভেজা চুলে মেয়েদের বেশি সুন্দর লাগে। কারণটা ঠিক পুরুষের সঠিকভাবে জানা নেই। তবুও নিঃসন্দেহে একজন পুরুষের কাছে গোসল শেষে নারীকে বেশি সুন্দর লাগে।
- জোঁক যেমন আঘাত ছাড়াই রক্ত চোষে, ঠিক তেমনি সুদের ব্যবসা করে অসহায় মানুষের বিপদে তাদের থেকে আসল সহ মুনাফা হাতিয়ে নেয়া একই কথা।
- পৃথিবীতে একটা পুরুষের জন্য একটা নারী অনেক শক্তিশালী অস্ত্রের সমান।
- লেখাপড়া শিখলেই যদি মানুষ হওয়া যাইতো, তাহলে দেশে এত অমানুষ থাকত না।
- আমি চলে গেলে কাজল তুমি তোমার দুঃখ শোনাবে কাকে?
- নিশি রাতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, সঙ্গী বানাইও তাকে।
- চোখের জল তখনি গড়িয়ে পড়ে, যখন খুব কাছের মানুষের দেওয়া আঘাত হৃদয়ে লাগে।
ঘাটতি: বইটির বেশকিছু জায়গায় টাইপিং মিসটেক ছাড়া তেমন কোনো কিছুর ঘাটতি রয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয় নি। তবে এক্ষেত্রে প্রকাশনীকে আরো সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৭/১০।
উপসংহার
আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরায় “ঝাউবনে জোছনা” বইটি পড়ে পাঠকের কাছে মনে হবে সে তার আশেপাশের খুব পরিচিত কোন গল্পকেই ভিন্ন আঙ্গিকে পাঠ করছে। আর বইটি পড়া শেষে পাঠকসমাজ লেখক মেহেদী হাসান এর কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো দারুণ কিছুর অপেক্ষায় থাকবেন বলেই বোধ করি।
এক নজরে বই;
বই: ঝাউবনে জোছনা
লেখক: মেহেদী হাসান।
ধরণ: সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশনী: পুস্তক।
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৪
মলাট মূল্য: ২২০/-

জন্ম কুমিল্লায়। নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলামে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছি পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।