মোবাইল নয়, মিসাইল! মুফতি তাকি উসমানী

মূল: মুফতি তাকি উসমানী
অনুবাদ: আবদুল্লাহ তামিম

বর্তমানে বিশ্বের বুকে মোবাইল একটি বড় বিপর্যয়। এ মোবাইল ‍বিপর্যয় এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীর মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাদরাসাগুলোকেও এ বিপর্যয় পেয়ে বসেছে। ক্যামেরা মোবাইল। এটি সবচেয়ে বড় বিপর্যয়, মুসিবত, আজাব। পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলছে। বড় বড় আলেম, মুত্তাকি, ফরহেজগার, নামাজী, আল্লাহওয়ালা, বুযুর্গ, কিন্তু যদি তার কাছে এই মোবাইল ফোন থাকে, অবশ্যই এ মোবাইল তাকে ধ্বংস করে দিবে। এ মোবাইলটিকেই বলা হয় স্মার্ট মোবাইল বা স্মার্টফোন। স্মার্টফোন দিয়ে কী হবে? এটি স্মার্ট মোবাইল নয় বরং এটি একটি মিসাইল। এ মোবাইল মানুষের নীতি-নৈতিকতা ধ্বংস করে দেয়। মানুষের দীন-ধর্ম বিনাশ করে দেয়। মানুষের আমল-আখলাক নি:শ্বেষ করে দেয়।

তাই আমরা মাদরাসাগুলোতে স্মার্টফোনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। এ কারণে আরোপ করেছি, এতে দুটি বড় ক্ষতি রয়েছে। একটি বড় ক্ষতি হলো স্মার্ট মোবাইলের সোশ্যাল মিডিয়া। এ স্যোসাল মিডিয়া অত্যন্ত মুত্তাকি-ফরহেজগার ব্যক্তির পক্ষেও গুনাহ ছাড়া ব্যবহার করা কঠিন। যেই এটি ব্যবহার করবে তার কোনো না কোনো গুনাহ অবশ্যই হবে।

অনেকে ভালো নিয়তে এ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে বললো। আপনিও বড় বুযুর্গের বয়ান, বড় বক্তার বয়ান শুনার জন্য স্যোসাল মিডিয়ায় একাউন্ট করে নিলেন। এরপর যা হবে, আপনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন ছবি বা ভিডিও আপনার সামনে আসবে, শয়তান আপনাকে ধ্বংশন করার সুযোগ পেয়ে যাবে। এমনকি বড় থেকে বড় আলেম, মুত্তাকি, ফরহেজগার, নামাজী, আল্লাহওয়ালা, বুযুর্গও যদি এটি ব্যবহার করেন, অবশ্যই তিনি গুনাহে লিপ্ত হয়ে যাবেন। আর একটি গুনাহ অন্য একটি গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। একটি ছোট গুনাহ হয়ে গেলে বিষয়টি হালকা হয়ে যায়। এরপর আপনার সামনে এবটি ছবি আসলো, দেখতে ভালোই লাগছে, আরেকটু গভীরে চলে গেলেন, এভাবে ধীরে ধীরে শয়তান একজন মানুষকে এক গুনাহ থেকে অন্য গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। একটি গুনাহ থেকে অরেকটি ‍গুনাহের দিকে এরপর তৃতীয় গুনাহে, তৃতীয় থেকে চতুর্থ গুনাহের দিকে ধাবিত করে। এই জন্যই আমি বলি আমাদের হাতে স্মার্ট মোবাইল নয় বরং মিসাইল রয়েছে। যা গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

আর এই নীতি সমগ্র আলেম জগতের মানুষের জানা আছে, উপকার পাওয়ার চেয়ে ক্ষতি পরিহার করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি বলেন, ভাই আমরা এই মোবাইল ফোন থেকে প্রচুর ওয়াজ নসিহত শুনতে পাই। আমরা বড়দের বয়ান শুনতে পাই। এতে আমরা একে অপরের জন্য প্রয়োজনীয় মেসেজ আদান প্রদান করি।

আমি বলবো, স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয় যদি উপকার পেতে, চোখের দ্বারা বিপথে চালিত হয়ে ভুল জায়গায় যাওয়া একটি বড় ক্ষতি। তো উপকার পাওয়ার চেয়ে ক্ষতি পরিহার করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং স্মার্টফোন সাধারণ মানুষের জন্যও বিপজ্জনক। কিন্তু দ্বিতীয় আরো কিছু কারণ আছে। যেগুলোর বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, আমাদের সবারই জানা আছে, এই বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই, দ্বিমত নেই যে, স্মার্টফোনে প্রচুর সময় নষ্ট করা হয়। এটি সময় নষ্ট করার অনেক বড় একটি মাধ্যম।

যদি মোবাইল ব্যবহারকারী একজন তালিবুল ইলম হয়, তবে তার সময় এতটাই মূল্যবান, যে তার প্রতিটি মুহূর্ত ইলম অন্বেষণে ব্যয় করা উচিত। শুধু মুতালায় ব্যয় করা উচিত, তাকরারে ব্যয় করা উচিত। একজন তালিবুল ইলম এমন হওয়া চাই, যদি তার কোনো মাসআলা বুঝে না আসে, এ মাসআলা বুঝে না আসা পর্যন্ত তার স্বস্তি আসবে না। এমনটাই হওয়া উচিত একজন তালিবুল ইলমের। সে ছাত্র হোক বা শিক্ষক, তার সময় মূল্যবান, প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, এমনকি আমাদের বুজুর্গরাও বলেছেন, মাগরিবের পর আওয়াবীনও পড়বে না ছাত্ররা, শুধু দুই রাকাত সুন্নত পড়বে, তারপরই পড়াশুনা শুরু করে দিবে।

এই ছিল আমাদের আকাবিরদের নসিহত। নওয়াফেল তোমার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ নয়, তোমার কিতাব, তোমার মুতালা, তোমার তাকরার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে ছাত্রদের সময় ব্যয় করা উচিত। তাই ছাত্রের সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, সে যদি পড়াশোনা করতে চায়, তাকে তার সময় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এই মোবাইল ফোন একজন তালিবুল ইলমের জন্য সময়ের অপচয়, এতে কোন সন্দেহ নেই। এটি ইলম ও তালিবুল ইলমকে ধ্বংসকারী এক মহামারী, এক বিপর্যয় যা আমাদের উপর নেমে এসেছে।

অতএব, আমরা তালিবুল ইলমদের নিষেধ করছি, আপনি যদি একজন তালিবুল ইলম হোন, ইলম অন্বেষণে আপনার সময় ব্যয় করুন। সময়ের অপচয় করে নীতি-নৈতিকতার ধ্বংস ডেকে আনবেন না। মোবাইলে পরে থাকলে আপনি দুনিয়াও পাবেন না আখেরাতও পাবেন না। ইহুকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তাই আমাদের মাদরাসায় স্মার্টফোনের বিধিনিষেধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান করতে হবে। আপনি যদি এই বিষয়ে একমত না হোন বা এই আইন আপনার ভালো না লাগে, অনুগ্রহ করে অন্য উপায় বেছে নিন। অন্য কোথাও চলে যান। কিন্তু আপনি যদি মাদরাসায় থাকতে চান, একজন তালিবুল হোন, আপনাকে এই নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

সবক উদ্বোধনী মজলিস, জামিয়া দারুল উলূম করাচি পাকিস্তান
২২ শাওয়াল ১৪৪৪ হিজরি
১৩ মে, ২০২৩