মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রক্ত। রক্ত ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করা যায় না। রক্ত হচ্ছে শরীরের এমন এক লিকুইড, যা অস্বচ্ছ, ক্ষারীয় এবং একটু লবণাক্ত। শরীরের মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ রক্ত, যার ৯২ ভাগই জলীয় পদার্থ।
রক্তের রং লাল কেন?
রক্তে ৩ ধরনের কণিকা রয়েছে- লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা এবং অনুচক্রিকা। লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিন নামে লৌহসমৃদ্ধ এক ধরণের প্রোটিন পিগমেন্ট থাকার কারণে রক্তের রং লাল হয়। মানুষের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দেখতে উজ্জ্বল লাল এবং অক্সিজেন বিহীন রক্ত গাঢ় লাল অথবা গাঢ় তামাটে বর্ণের হয়ে থাকে। তাই যে রক্তে হিমোগ্লোবিন নেই সেই রক্ত লাল রঙের হয় না। যদি মানুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের কোনো অস্বাভাবিক মাত্রা বা গঠন দেখা যায়, তবে রক্ত বাদামি অথবা সবুজ হতে পারে। এর অর্থ ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় মানুষের ত্বক, বিশেষ করে ঠোঁট ও আঙুলে নীলাভ বর্ণ দেখা যায় এবং রক্ত চকলেট-বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এই অবস্থাকে বলা হয় মিথোহিমোগ্লোবিনেমিয়া এবং এর ফলে ‘ব্লু বেবি সিনড্রোম’ দেখা দেয়।
সব প্রাণির রক্তই কি লাল?
এমন অনেক প্রাণি রয়েছে যাদের রক্ত আসলেই হলুদ, কমলা, সবুজ কিংবা বর্ণহীন হয়। যেমন টিকটিকি, ব্যাঙ, তেলাপোকা, গিরগিটি ইত্যাদি। বিশেষ করে আর্থ্রোপোডা পর্বের বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গের রক্ত ফ্যাকাসে হলুদ, ফ্যাকাসে সবুজ অথবা বর্ণহীন। তাদের ব্লাডে হিমোগ্লোবিনের পরিবর্তে হিমোলিম্ফ থাকে।
কেন রক্তের গ্রুপের বিভিন্নতা?
রক্তের গ্রুপিং জানার প্রয়োজনীয়তা যে কত বেশি তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অনুযায়ী ৩২ টি গ্রুপিং করা যায়। এর মধ্যে ABO grouping সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। Rh typing, নেগেটিভ বা পজেটিভ ব্লাড গ্রুপ বোঝার জন্যে ABO grouping এর সাথে ব্যবহার হয়। এখন একটু জেনে নিই ABO grouping টা কী ? আর Rh typing টাই বা কী?
ABO grouping
মানুষের শরীরের রক্তের লোহিত কণিকায় দুটি এন্টিজেন Aও B এবং দুটি অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের রক্তের যে গ্রুপিং করা হয়, সেটিই ABO grouping.
A শ্রেণি: অ্যান্টিজেন A এবং অ্যান্টিবডি b থাকে।
B শ্রেণি: অ্যান্টিজেন B এবং অ্যান্টিবডি a থাকে।
AB শ্রেণি: অ্যান্টিজেন A এবং অ্যাটিজেন B থাকে। কিন্তু কোন অ্যান্টিবডি থাকে না।
O শ্রেণি: কোন অ্যান্টিজেনই থাকে না। তবে অ্যান্টিবডি a এবং b থাকে।
এর বাইরে আরো এক ধরনের ব্লাড গ্রুপ রয়েছে, যাকে রেসাস বা Rh গ্রুপ। এর দুটি ভাগ রয়েছে, Rh পজিটিভ এবং Rh নেগেটিভ।
গোল্ডেন ব্লাড কী?
বিশ্বে এই গ্রুপের মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রতি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১ জনের শরীরে এই রক্ত থাকতে পারে। বর্তমানে মাত্র সর্বোচ্চ ৫০ জনের দেহে এটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
সাধারণত রক্ত পজিটিভ নাকি নেগেটিভ হবে, তা নির্ভর করে আরএইচ প্রোটিনের ওপর। এটি থাকলে রক্ত পজিটিভ, অন্যথায় নেগেটিভ। তবে যাদের যাদের গোল্ডেন ব্লাড রয়েছে তাদের Rh প্রোটিন
বৈশিষ্ট্য কোন গ্রুপের সাথেই মিলে না। মজার ব্যাপার হলো, নাম গোল্ডেন হলেও এই রক্তের রঙ কিন্তু লালই। মূলত জিনগত কারণে মানুষের এমন রেয়ার ব্লাড গ্রুপ হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও দুর্লভ রক্ত। কারণ, গোল্ডেন ব্লাডের অধিকারী মানুষ বিশ্বের যেকোনও মানুষকে রক্ত দিতে পারেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিরল রোগের চিকিৎসায়ও গোল্ডেন ব্লাড ব্যবহৃত হয়।
রক্ত দিতে/নিতে ব্লাড গ্রুপ কেন জরুরি?
কারও শরীরে A এন্টিজেন আছে। মানে তার রক্তের গ্রুপ হবে A। আর তা রক্তের জলীয় অংশে Anti-B এন্টিবডি থাকবে। এখন তিনি যদি B ব্লাড গ্রুপের কাউকে রক্ত দেন যার রক্তে কিনা Anti-A এন্টিবডি আছে, তবে ডোনারের A এন্টিজেনের সঙ্গে রক্তগ্রহীতার Anti-A এন্টিবডি বিক্রিয়া করবে, যার ফলে রক্তগ্রহীতার শারীরিক অসুবিধা হবে। রক্ত জমাট বেঁধে তার পুরো ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম কলাপ্স করতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
তাই সাধারণত এক গ্রুপের রক্ত আরেক গ্রুপে দেয়া যায় যায় না। আবার নেগেটিভ রক্ত পজেটিভ রক্তে দেয়া যায়, কিন্তু পজেটিভ রক্ত নেগেটিভে দেয়া যায় না, কারণ নেগেটিভ রক্ত পজেটিভের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করতে পারে। আর এ কারণেই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর ব্লাড গ্রুপ জেনে নেওয়া খুব জরুরি।
রক্ত দেহের অভ্যন্তরে কাজ কী
পুষ্টিবিষয়ক কাজ: পরিপাককৃত খাবার থেকে উদ্ভূত পুষ্টিকর পদার্থসমূহ যেমন গ্লুকোজ, অ্যামিনো অ্যাসিড, লিপিড ও ভিটামিনসমূহ পরিপাক নালি থেকে শোষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয় এবং দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে কাজে লাগে।
শ্বসনমূলক কাজ: রক্তের মাধ্যমে শ্বসন গ্যাসসমূহ পরিবাহিত হয়। এটি ফুসফুসের অ্যালভিওলাস বা বায়ুস্থলী থেকে দেহের বিভিন্ন টিসুতে অক্সিজেন এবং টিসু থেকে ফুসফুসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বহন করে নিয়ে যায়।
রেচনমূলক কাজ: দেহের টিসুতে বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার সময় উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থসমূহ রক্তের মাধ্যমে অপসারিত হয় এবং বৃক্ক, ত্বক, যকৃৎ প্রভৃতি রেচন অঙ্গসমূহে পরিবাহিত হয়।
হরমোন ও উৎসেচকসমূহের পরিবহণ: অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলো সরাসরি রক্তে অবমুক্ত হয়। রক্ত এই হরমোনগুলোকে তাদের উদ্দিষ্ট অঙ্গ বা টিসুতে বহন করে নিয়ে যায়। রক্ত উৎসেচকও পরিবহণ করে।
জলীয় সাম্য রক্ষা: রক্তের জলীয় অংশ ইন্টারস্টিশিয়াল তরলের সাথে মুক্তভাবে পরস্পর বিনিময়যোগ্য যা দেহের তরলের সাম্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অম্ল-ক্ষার সাম্য রক্ষা: রক্তরস প্রোটিন ও হিমোগ্লোবিন বাফার হিসেবে কাজ করে এবং অম্ল-ক্ষার সাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: রক্তের আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায় এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, অর্থাৎ দেহের তাপ হরণ ও তাপ গ্রহণের মধ্যে সাম্য রক্ষা করে।
সঞ্চয় কাজ: পানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদার্থ যেমন প্রোটিন, গ্লুকোজ, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম টিসুর জন্য অবিরাম প্রয়োজন। রক্ত এ-সকল পদার্থগুলোর জন্য তৈরি উৎস হিসেবে কাজ করে। অনাহার, তরল-হানি, ইলেকট্রোলাইট-হানি প্রভৃতি অবস্থায় রক্ত এ-সকল পদার্থের যোগান দিয়ে থাকে।
প্রতিরক্ষামূলক কাজ: দেহের প্রতিরক্ষা কাজে রক্তের ভূমিকা অনেক। শ্বেত রক্তকণিকা এই কাজের জন্য দায়ী। নিউট্রোফিল ও মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াকে গ্রাস করে। লিম্ফোসাইটসমূহ দেহের অনাক্রম্যতা বা প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ইওসিনোফিল বিষাক্ত উপাদান অপসারণ, দ্বিখণ্ডায়ন ও বাইরের প্রোটিন অপসারণের জন্য দায়ী।

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।