প্রেম ও দ্রোহের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। রুদ্রের জন্ম তার পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তিনি বরিশাল আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার সাহেবের মাঠ গ্রামে। তার বাবার নাম ডা. শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম।
ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল কবি রুদ্রর। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বোনের ট্র্যাংক থেকে তিনি ও তার মামাতো ভাইয়েরা মিলে টাকা ধার করেন। কথা ছিল তারা সিনেমা দেখতে যাবেন। কিন্তু সেটি না করে তারা একটি লাইব্রেরি তৈরি করলেন। লাইব্রেরির নাম দেয়া হয়েছিল বনফুল লাইব্রেরি।
যৌবন
যৌবনে রুদ্র ছিলেন প্রাণবন্ত এবং কিছুটা উচ্ছন্ন। খেয়ালীপনা তার মধ্যে ছিল না। তার চুল ছিল কোঁকরা। তার মুখে ছিল খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। জিন্স পরতেন প্রায় সময়ই। সবসময় আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। তবে কবিতার ক্ষেত্রে তিনি অনেক মনোযোগী থাকতেন। তার এই অস্থির ভাব নিয়ে কবি শামসুল হক বলেছিলেন, “তার মধ্যে যে বাউন্ডুলেপনা ছিল তা তাকে সুস্থির হতে দেয়নি।”
শিক্ষাজীবন
ঢাকা ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। চার বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়েছিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ।
কর্মজীবন
তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতৃপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাদের অন্যতম৷তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং “ভালো আছি ভালো থেকো”সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন।
বৈবাহিক জীবন
১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।
সাহিত্যচর্চা
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে— কবিতা: উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)। ছোটগল্প: সোনালি শিশির। বড়গল্প: মনুষ্য জীবন। নাট্যকাব্য: বিষ বিরিক্ষের বীজ।
মৃত্যু
বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি আরও মুক্ত জীবনযাপন করতে শুরু করেন। তিনি খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করতেন। ঠিকঠাক সময়ে খেতেন না এবং নিজের শরীরের যত্ন নিতেন না। ফলে তার পাকস্থলিতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে তিনি মারা যান। বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার মিঠাখালি মামার বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই কবি।

জন্ম কুমিল্লায়। নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলামে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছি পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।