ডা. লুবনা খন্দকার
সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
শীতের হিমেল অনুভূতি ক্রমে টের পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জে তো শীত পড়েই গিয়েছে। তাই এসময় আমাদের ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকও শুষ্ক হয়ে পড়ে। শীতল তাপমাত্রা ও কম আর্দ্রতায় ত্বকে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এসময় বয়স্করা শুষ্ক ত্বকের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। কারণ বয়স্ক মানুষের ত্বকে প্রাকৃতিক তেলের পরিমাণ কম থাকে। শুষ্ক ত্বক রুক্ষ হয়ে চুলকানির সৃষ্টি করে। চুলকানি থেকে তৈরি হয় স্ক্র্যাচ। বারবার স্ক্র্যাচিং ও ঘষায় ত্বকের চামড়া পুরু হয়ে পড়ে। এ ছাড়া কারও কারও ফোস্কা, ফুসকুড়ি, লালচে ভাব দেখা দেয়। অনেকের অ্যাকজিমাও হয়। ত্বকের অ্যাকজিমা হাত ও মুখ থেকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
শীতকালে ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ পানি কম পান ও ঘনঘন সাবানের ব্যবহার। সাবানে ইমালসিফায়ার নামক উপাদান থাকে, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করে। এ ছাড়া স্ক্রাব ব্যবহারেও ত্বকের তেল কমে যায়। সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়ায় হাতের ত্বকেও শুষ্কভাব দেখা দেয়।
আরও কারণ : ত্বকের উপযোগী নয়- এমন ময়েশ্চারাইজার কম ব্যবহারেও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। শীতের পোশাকে থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বক শুষ্ক করতে ভূমিকা রাখে। শীতে উলের পোশাক কারও কারও ত্বক শুষ্ক করে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কলেস্টেরল, অ্যালার্জি ও ব্রণের ওষুধ (আইসোট্রেটিনয়েনের মতো রেটিনয়েডস) সেবনকারীদের ত্বকও শুষ্ক হতে পারে। অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম এবং অপুষ্টি (ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি’র অভাব) শুষ্ক ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কিত। হরমোনাল পরিবর্তনেও ত্বক শুষ্ক হতে পারে। যেমন- মেনোপজ হয়েছে, এমন নারীর ত্বক শীতকালে শুষ্ক হয়ে পড়ে।
করণীয় : এই সময় বাইরে গেলে অবশ্যই সোয়েটার, চাদর, গ্লাভস, স্কার্ফ, টুপি, মোজা পরতে হবে। ফিরে এসে হাত ধোয়ার পর ময়েশ্চারইজার ব্যবহার করতে হবে। দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারইজার মাখতে হবে। অ্যাকজিমা রোগের জন্য ময়শ্চারাইজিং স্কিনকেয়ার গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শিয়া মাখনের মতো ভারী ময়েশ্চারাইজার বা কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক পরিষ্কারে মাইল্ড ক্লিনজার বা ক্ষারহীন সাবান উপযুক্ত। অনেক সুগন্ধযুক্ত, ডিওডোরেন্ট, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল সাবান শীতের সময় উপযোগী নয়। এ সময় হারবাল পণ্য বেছে নিতে পারেন। গোসলের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ময়েশ্চারাইজার দেওয়া উচিত।
সূর্যের আলোয় থাকলে আমাদের ত্বক প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারে। শীতে সূর্যের আলো কম পাওয়া যাওয়ায় ডি’র অভাবে ক্যাপসুল অ্যাকজিমা বাড়ে। শুষ্কতা কমাতে এসময় ইনডোর রুম হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। যাদের অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস জাতীয় চর্মরোগ আছে, শীতের শুরুতেই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, যাতে অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ওষুধ ও ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
চুলকানি কমাতে স্টেরয়েড ক্রিম, টপিকাল ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটারগুলি, প্রদাহ কমাতে ফটোথেরাপি সহায়ক। ওরাল অ্যান্টিহিস্টামিন, যেমন- ডাইফেনহাইড্রামিন, হাইড্রোক্সিজিন বা সিটিরিজিন রাতে খেলে শুষ্ক ত্বকের চুলকানি কমে। যেসব খাবার খেলে অ্যালার্জি বা অ্যাকজিমা বাড়ে, সেসব খাবার বাদ দিতে হবে।

জন্ম কুমিল্লায়। নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলামে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করেছি পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।