সন্তানের জীবন গড়তে বইয়ে আসক্তি করা জরুরি

জীবন সত্যিই বৈচিত্রময়। আপনার সন্তান আপনার থেকেই শিখবে। সন্তানের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস করতে সবার আগে বই কেনা জরুরি। সন্তানের বয়স অনুসারে তার জন্য বই কিনে দিন। শিশু গল্প শোনার বায়না করলে তাকে বই পড়ে শোনান। শুনতে শুনতে একসময় তার মধ্যে পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। সন্তান বই পড়া শিখলে তাকে পাঠের বাইরের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। কোথাও বেড়াতে গেলে নিজের জন্য বই নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের ব্যাগে তার পছন্দের কয়েকটি বই ঢুকিয়ে দিন। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা বড়দের দেখে শেখে। এজন্য আপনি নিজে বই পড়ুন, তার মধ্যেও পড়ার কৌতূহল তৈরি হবে।

সন্তান যে বইটি পড়ছে তা নিয়ে তার সঙ্গে গল্প করুন। তার কাছে বিষয়বস্তু জানতে চান। এতে সে আরও বই পড়ার উৎসাহ পাবে। বই কেনার সময় বা অর্থ না থাকলে পাড়া বা মহল্লার কোনো পাঠাগারে সন্তানসহ নিজে ভর্তি হন। ছুটির দিনে বা অবসরে সন্তানকে নিয়ে পাঠাগারে ঢুঁ মারুন। অন্যদের দেখেও পড়তে আগ্রহী হবে সে।

সন্তানের বয়স কম হলে তাকে কম পৃষ্ঠার বড় বড় ছবিযুক্ত বই পড়তে দিন। কম সময়ে পড়ে শেষ করতে পারলে নিজেই আরেকটি বই পড়তে চাইবে। এবার আগেরটির চেয়ে কয়েক পৃষ্ঠা বেশি কোনো বই পড়তে দিন।

বাসার বারান্দা, চিলেকোঠা, ছাদ বা সুবিধাজনক যে কোনো একটি স্থানে রিডিং কর্নার গড়ে তুলুন। বই নিয়ে আড্ডা দিন। দেখবেন বাড়ির ছোট সদস্যটিও এখানে বসে বই পড়তে শুরু করবে।

শিশুর জন্মদিনে বেশিরভাগ অভিভাবক খেলনা উপহার দিয়ে থাকেন। তবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে ছোটবেলায় শিশুর জন্মদিনে বই উপহার দিন। এতে করে আপনার সন্তানও বইয়ের প্রতি আপনি যে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটি বুঝবে এবং ধীরে ধীরে নিজের মধ্যেও বইয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে।

অনেক সময় শিশুরা বই পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারণ বইগুলো তাদের বয়স উপযোগী হয় না। তাই সঠিক বইটি বাছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বই কেনার অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে আপনার শিশুটি পাঠক হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে আপনার সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে ঘুরে আসুন। এতে করে সে যেমন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাবে, যা তাকে বইয়ের প্রতি আরও আগ্রহী করবে, একই সঙ্গে বইয়ের দোকান ও লাইব্রেরিতে যাওয়ার প্রতিও আগ্রহী করবে।

ঢাকা শহর তো বটেই, মফস্বলের শিশুদের চোখও এখন ঢেকে যাচ্ছে ভারী চশমার কাচের আড়ালে। এর পেছনে দায়ী অতিরিক্ত স্মার্টফোন, টিভি ও ট্যাব আসক্তি। শিশুকে কাগজের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন। কাগজের বই ধরে পড়া, পৃষ্ঠা উল্টে পড়ার যে আনন্দ তা স্মার্টবুক বা পিডিএফে পাওয়া যায় না।