সাপোজিটরি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

এস, এম তৌফিক।।

সাপোজিটরি অনেকের কাছে ডুস হিসেবে বহুল প্রচলিত। অনেকক্ষেত্রে এর সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি না জানার ফলে রোগীদেরকে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এক্ষেত্রে ফার্মেসীতে বা ডাক্তার বা অন্য কারো কাছে এর ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ, নিজে নিজে না জেনেই এটি ব্যবহার করার প্রবণতা বা ব্যবহার করতে না জানার কথা চিন্তা করে সাপোজিটরি ব্যবহার না করে বরং ভোগান্তিকেই বেছে নেয়াসহ ইত্যাদি কারণ রয়েছে। এছাড়াও এর ব্যবহার পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মতন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সহ সম্পর্কিত ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়ে অনেকের মনেই রয়ে যায় নানান প্রশ্ন যে প্রশ্নেগুলোর উত্তর লজ্জাবোধের কারণে বেশিরভাগেরই আর জানা হয়ে উঠে না।

সাপোজিটরি কী?
সাপোজিটরি হল এক ধরনের ঔষধ বিতরন ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কঠিন, তরল বা বায়ুবীয় ঔষধ উপাদান বিতরন করা হয় পায়ুপথে প্রয়োগ করার জন্য। সাপোজিটরির শক্ত অথবা স্থিতিস্থাপক আবরণ জিলাটিন নামক আমিষ (প্রোটিন) দিয়ে বা অন্যান্য উপাদান দ্বারা তৈরী হতে পারে যা পায়ুপথের সাধারণ তাপমাত্রায় সহজেই গেলে যায় এবং পায়ুপথের ভেতরে ওষুধের সক্রিয় উপাদান মুক্ত করে দেয়।

সাপোজিটরি কি শুধু মলদ্বারের মাধ্যমেই দেহে করানো হয়?  সাপোজিটরির কি এক ধরণেরই হয়?

সাপোজিটরি শুধু মলদ্বারের মাধ্যমেই প্রবেশ করানো হয় না। ভিন্ন ধরণের সাপোজিটরি ভিন্ন ভিন্ন প্রবেশপথের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করানো হয়। সাপোজিটরি মূলত ৩ ধরণের হয়ে থাকে। যেমন-

১. রেক্টাল সাপোজিটরি: এ ধরণের সাপোজিটরি মলদ্বারে ব্যবহার করা হয়। সচারাচর জ্বর, কোষ্টকাঠিন্যসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য এ ধরণের সাপোজিটরি ব্যবহার করা হয়। তবে এটি ছাড়াও আরো ২ ধরণের সাপোজিটরি রয়েছে৷ এগুলো হলঃ

২. যোনি সাপোজিটরি:  চিকিৎসার জন্য মহিলারা যোনিতে এ ধরণের সাপোজিটরি ব্যবহার করে থাকে। এ সাপোজিটরিগুলো ছত্রাকের সংক্রমণ এবং যোনি শুষ্কতার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। কেউ কেউ গর্ভনিরোধক হিসেবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্যও সাপোজিটরি ব্যবহার করে।

৩. ইউরেথ্রাল সাপোজিটরি: পুরুষরা বিরল ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য এক ধরনের ইউরেথ্রাল সাপোজিটরি ব্যবহার করতে পারে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

রেক্টাল সাপোজিটরি ব্যবহার করার আগে এবং পরে আপনার হাত ভালভাবে ধুয়ে নিবেন। সাধারণত ওষুধটি ফয়েলে মোড়ানো থাকে। ব্যবহারের সময় ফয়েলের মোড়কটি সরিয়ে ফেলুন। ব্যবহার করার আগে ডান হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে বাম পাশে শুয়ে পড়ুন। এরপর আপনার আঙুল ব্যবহার করে, মৃদুভাবে সাপোজিটরিটি মলদ্বারে ভালভাবে প্রবেশ করান (প্রথমে নির্দেশিত প্রান্ত)। পরে, যদি সম্ভব হয় ১৫-২০ মিনিটের জন্য একই অবস্থানে থাকুন যতক্ষণ না আপনি মলত্যাগের জন্য একটি শক্তিশালী তাগিদ অনুভব করেন। তবে সাপোজিটরি মলদ্বারে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই মৃদু মলত্যাগের ইচ্ছা দেখা দেয় তাই তখনই সাথে সাথে উঠে মলত্যাগ করতে না যাওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে দেখা যায় শুধুমাত্র সাপোজিটরিটিই বের হয়ে যায়, মলত্যাগ হয় না।

আপনি যদি কোনও শিশুকে এই পণ্যটি ব্যবহার করতে সহায়তা করেন, তাহলে শিশুটিকে বা পাশ হয়ে শুয়ানো অবস্থায় নীচের পা সোজা করে এবং উপরের পা পেটের দিকে বাঁকিয়ে রাখুন বা হাটু ভাজ করিয়ে রাখতে বলুন। এরপর আপনার আঙুল ব্যবহার করে, আলতো করে মলদ্বারে সাপোজিটরি প্রবেশ করান (প্রথমে নির্দেশিত প্রান্ত)। কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিতম্ব একসাথে ধরে রাখুন। তারপর, তাকে ১৫-২০ মিনিটের জন্য শুয়ে থাকতে বলুন যাতে সাপোজিটরি বের হওয়া থেকে বিরত থাকে।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, সাপোজিটরি ব্যবহারের সময় তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি বা তেল ব্যবহার করবেন না। এটি করার ফলে পণ্যটি কম কার্যকর হতে পারে।

লেখক: ব্যাচেলর অফ ফার্মেসী,
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়।