এস. এম তৌফিক।।
“আজ আমার মন ভালো নেই” বইটির প্রচ্ছদকারী লেখকের গল্পের বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে। বইটির প্রচ্ছদ দেখেই পাঠক কিছুটা ধারণা করতে পারবেন যে, গল্পটি আবর্তিত হয়েছে কোনো নারী চরিত্রকে ঘিরে। তবে প্রচ্ছদটি পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগাবে, তবে কী সেখানে হয়তো অন্যরকম কিছু লুকিয়ে আছে? যা খুব সহজেই পাঠককে বইটির কাছে টানবে, সম্পুর্ণ গল্পটা জানার ইচ্ছা জাগাবে।
লেখক সম্পর্কে
বর্তমান সময়ের ল তরুণ লেখক শাদবিন শাকিলের জন্ম ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে। কিশোর বয়সে বেড়ে ওঠেন দক্ষিণাঞ্চলের কীর্তনখোলা নদীর পাড়ের শহর বরিশালে। বর্তমানে তিনি সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক শেষে স্নাতকোত্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্কুল জীবন থেকেই তার গল্প পড়া এবং কবিতা আবৃত্তির শখ ছিল । নহলী প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং সন্মানিত লেখক বদরুল মিল্লাত স্যারের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় লেখা “যদি তব দেখা পাই” তার প্রথম উপন্যাস। ২০২০ বইমেলায় নহলী থেকে প্রকাশিত হওয়া বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। “আজ আমার মন ভালো নেই” তার লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস।।
গল্প সংক্ষেপ
মূলত তিনটি পরিবারের কাহিনীকেই গল্পটিতে কবি একত্রিত করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যেখানে সোমা ও নায়লা মামাতো-ফুফাতো বোন। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথমে দু’বোনকে ভাবলেও ধীরে ধীরে নায়লা চরিত্রটিকেই কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয় এ গল্পে। গল্পের এক পর্যায়ে সোমাকে প্রেমের নামে ফাঁদে ফেলা সাব্বির নামের এক যুবক নায়লাকেও ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এভাবেই এগুতে থাকে গল্প যেখানে দেখা মিলবে সমাজ জীবনে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা, মাদকের অভিশাপ,প্রতিশোধ, আত্নত্যাগ, স্বার্থপরতা, লোভ ইত্যাদি।
পাঠ পর্যালোচনা
গল্পটি মূলত একটি সামাজিক গল্প। আমাদের সমাজের পরিবারগুলোতে ঘটে যাওয়া সাধারণ গল্পকে লেখক অসাধারণভাবে ফুটি তুলে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন। এ গল্পে আপনি আপনার আশেপাশের কোনো পরিবারের প্রতিচ্ছবিই খুজে পাবেন বলে আশা করি। গল্পটি প্রথমদিকে মনে হবে এটা কোনো সাধারণ প্রেমের গল্প, তবে মজাটা এখানেই পাঠক যখন গল্পের গভীরে যেতে শুরু করবে তখনই সে অবাক হয়ে ভাববে যে আরে! এত আমাদের সমাজেরই ঘটে যাওয়া গল্প। গল্পটি অতিচেনা লাগলেও লেখকের লেখায় আপনি ভিন্নভাবে গল্পটিকে উপলব্ধি করতে পারবেন। কি নেই এ গল্পে! আত্নত্যাগ, প্রেম-ধোকা, লোভ, ফাঁদ,স্বার্থপরতা সব কিছুর যেনো দারুণ এক প্যাকেজ নিয়ে বসেছেন এমনটি মনে হবে।
এছাড়াও গল্পে মাদকসেবীর পরিণাম এবং একজন মাদকাসক্ত শুধু নিজের পরিবার ই নয় তার সাথে জড়িয়ে থাকা জীবনগুলোকে এবং আশেপাশের সমাজকে কী পরিমাণ সমস্যায় ফেলে! সে দিকটিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা বর্তমান সমাজের জন্য যা শিক্ষণীয় দিক বলে মনে করি।
প্রিয় লাইন: “আরিফ, আজ আমার মন ভালো নেই, তুমি আমার মন ভালো করে দাও।”
ঘাটতি
এই উপন্যাসের বিশেষ যে দিকটি উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে উপন্যাসের ভেতরেও আরেকটা উপন্যাস লেখার প্লট। ঘাটতি বিবেচনা করলে এ দিকটাকেই হয়তো অনেকে বিবেচনা করবেন। কারণ, উপন্যাসের ভেতরে শুরু করা উপন্যাসটি আর শেষ করা হয়নি।
তবে এর উল্টো কারণও থাকতে পারে। হতে পারে এটা লেখকের লেখার কৌশল, তিনি হয়তো ইচ্ছে করেই ভেতরের উপন্যাসটা শেষ করেননি কিংবা করতে চাননি পাঠকদেরকে ভাবনার জগতে ঠেলে দিয়ে উপন্যাসের শেষটা কেমন হতে পারে? এমন দ্বিধা-দ্বন্দে হাবুডুবু খাওয়াবেন বলে।
এক নজরে বই
“আজ আমার মন ভাল নেই”
লেখক: শাদবিন শাকিল।
প্রচ্ছদ: রিফাতুল ইসলাম।
মলাট মূল্য: ২৪০/-
প্রকাশনী: নহলী।

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।