এস, এম তৌফিক।।
ঠিক করে বলুন, কে আপনি?
আমি কে সেটা জানা কি খুবই জরুরী?
অবশ্যই জরুরী, আপনি রাতের অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করছেন। আমার সঙ্গে সঙ্গম করছেন, আর আমি জানব না আপনি কে? আশ্চর্য।
হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই জানবে।
তাহলে বলুন।
সে তার গলাটাকে প্রচন্ড রকম গম্ভীর করে বলল, আমি ভিন গ্রহের প্রাণী।
মিতু অবিশ্বাসের স্বরে বলল, এলিয়েন!
এলিয়েন বলে কিনা জানিনা, তবে আমি এই পৃথিবীর কেউ না। পৃথিবী থেকে অনেক দূরের একটা গ্রহ থেকে এসেছি।
আপনার সাথে আর কে কে এসেছে?
কেউ না, আমি একাই এসেছি। আমার আর কোনো সঙ্গী নেই। কোটি কোটি বছর আমি নিঃসঙ্গ ভাবে বেঁচে আছি।
মিতু ব্যঙ্গ করে বলল, তো এলিয়েন সাহেব আপনি পৃথিবীতে কেন এসেছেন, আর আমার কাছেই বা কি চান আপনি?
সে সহজ গলায় বলল, আমি আমার বংশ বৃদ্ধি করতে চাই।
নামকরণ: বইটির নামকরণ করা হয়েছে গল্পে মিতু চরিত্রের গর্ভে থাকা দু’টি যমজ শিশু ‘এলি’ এবং ‘নুষ’ অনুসারে। খুব সম্ভবত ‘এলি’ এবং ‘নুষ’ নাম দু’টি এলিয়েন এবং মানুষ শব্দ দু’টির শব্দাংশ থেকেই লেখক ভেবে রেখেছিলেন।
প্রচ্ছদকথন: প্রচ্ছদ জগতে ধ্রুব এষ নামটিই একটি ব্র্যান্ড বলা চলে। ‘এলিনুষ’ বইটির ক্ষেত্রেও তিনি তার কাজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। একটি সায়েন্স ফিকশন বইয়ের জন্য যেমন প্রচ্ছদ সহজেই পাঠকের নজর কাড়বে, আগ্রহ, কৌতুহল সৃষ্টি করবে ঠিক তেমনই এক প্রচ্ছদ লেপ্টে দিয়েছেন ‘এলিনুষ’ বইটির শরীরে। বইটির নামের মতন প্রচ্ছদেও মানানসইভাবে এক অদ্ভুত প্রাণী বা এলিয়েন এবং মানুষ এর অবয়ব ফুটে উঠেছে ।
ঊৎসর্গ: সাগর জাহান, যার নাটক রচনা এবং পরিচালনা দেখে লেখক মুগ্ধ হন এবং লেখকের মতে বাংলাদেশের সেরা নির্মাতা সাগর জাহান।
লেখক সম্পর্কে: মুহাম্মদ ইব্রাহীম জন্ম ১৯৯২ সালের ৯ নভেম্বর। জন্মস্থান শরীয়তপুরে হলেও লেখকের শৈশব, কৈশোর এবং বর্তমান সবই নারায়ণগঞ্জে। লেখক মুহাম্মদ ইব্রাহীম পাঠকসমাজে অধিক পরিচিত ‘কবি সাহেব’ নামে। এলিনুষ বইটি লেখকের মস্তিষ্কের ৩য় সন্তান।
চরিত্রায়ন: মিতু, ভিনগ্রহী এলিয়েন, মিতুর মা দিলারা বেগম, মিতুদের ভাড়াটিয়া হাসান এবং তার স্ত্রী তুলি, ডা. সেলিনা, বিজ্ঞানী আজিজুল হক, সম্ভু ওঝা সহ আরো অনেকে।
কাহিনী সংক্ষেপ: গল্পটি মূলত একজন মানুষ এবং এলিয়েনের মিলিত বাচ্চা জন্মদানকে কেন্দ্র করে। যেখানে কোনো এক ভিনগ্রহী এলিয়েন নিজের বংশবৃদ্ধির করতে চাইলেও তার কোনো সঙ্গী না থাকায় তাকে বেছে নিতে হয় পৃথিবীর একটি মেয়েকে। যেখানে মেয়েটির অনিচ্ছা সত্ত্বেও এলিয়েনটি তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় এবং মেয়েটির গর্ভে এলিয়েনের বাচ্চা কনসিভ হয়। এভাবেই এগুতে থাকে গল্প৷ তবে গল্পের এক পর্যায়ে মিতু বাচ্চাগুলোকে এবরশনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে দেখা যায় মিতুর মধ্যে মায়ের ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এলিয়েনের বাচ্চা হলেও নিজ গর্ভে ধারণ করায় বাচ্চাগুলোর প্রতি তার মায়া সৃষ্টি হয়। কারণ, বাচ্চাগুলোর বাবা এলিয়েন হলেও মিতু তাদের মা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানী আজিজুল হকের চরিত্রটি রহস্যের সৃষ্টি করে গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
পাঠ পর্যালোচনা: এই উপন্যাসে লেখক মুহাম্মদ ইব্রাহীম এর ধারাবাহিক ধারাবিবরণী বা গল্প বর্ণনার ক্ষেত্রে তার যে ধরণের লিখনশৈলী লক্ষ্য করা গেছে তা এককথায় চমৎকার। পাশাপাশি গল্পের প্লট, প্রতিটি চরিত্রের উপস্থাপন, এলিয়েনের বিভিন্ন ক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা, ভিনগ্রহের বর্ণনাসহ খুটিনাটি সকল বিষয়ের সাবলীল ধারণা পাওয়া গেছে। বইটির পাতা উলটে যতই সামনে এগিয়েছি গল্পের প্রতি আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা একজন লেখকের কাছে তার পাঠককে ধরে রাখার সবচেয়ে বড় অস্ত্র বলে মনে করি।
প্রিয় লাইন
- তামার তার দিয়ে বিদ্যুৎ যে গতিতে প্রবাহিত হয়, একজন মহিলা তার চেয়েও দ্রুতগতিতে গুজব ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে।
- ঠান্ডা মাটির স্পর্শ মনে পবিত্রতা আনে। মাটির সঙ্গে মানুষের একটা আত্নিক টান আছে। মানুষ নিজে মাটির তৈরি বলেই কি এই টান অনুভব করে?
- সব সুযোগ তো মানুষ কাজে লাগাতে পারে না। কিছু সুযোগ মানুষের ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা থেকেই মানুষ একদিন সাফল্য লাভ করে।
- এই মহাবিশ্বে মানুষের চেয়ে হিংস্র প্রাণী আর একটিও নেই। আবার মানুষের চেয়ে ভালো প্রানীও দ্বিতীয়টি নেই।
বিশেষ দিক: গল্পটিতে আজিজুল হকের ” পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে না বরং সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে।” এমন থিওরি আবিস্কার বা প্রমাণের জায়গাটিতে পাঠকেরা বিশেষভাবে ভাবনার জগতে ঠেলে দিবে। এমন থিওরিতে অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে সেজন্য লেখক বইয়ের শুরুতেই বিষয়টি সম্পর্কে ধোয়াশা দূর করে দিয়েছেন।
প্রোডাকশন: বইটিতে ২/১ টি টাইপিং মিস্টেক ছাড়া বইয়ের বাইন্ডিং থেকে শুরু করে পৃষ্ঠার মান, কালিসহ সকল বিষয়াদি একত্রে মিলে বইটিকে সুন্দরভাবেই পূর্ণতা দিয়েছে। প্রোডাকশনের কাজে প্রকাশনীসহ অন্যান্য জড়িতদের কাজের নিখুঁত মিলন ঘটেছে বইটিতে।
ব্যক্তিগত রেটিং: ৭/১০
পরিশেষে বলা যায়, লেখক মুহাম্মদ ইব্রাহীম বইটির মাধ্যমে ফিকশন প্রেমিদের দারুণ একটা উপন্যাস উপহার দিয়েছেন বলে মনে হয়েছে। এ বইয়ের পাঠকেরা অধীর আগ্রহে মুখিয়ে থাকবে মুহাম্মদ ইব্রাহীম এর লেখা নতুন কোনো সায়েন্স ফিকশন বইয়ের অপেক্ষায় এমনটাই আশা করছি।
একনজরে বই;
বই: এলিনুষ
লেখক: মুহাম্মদ ইব্রাহীম
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
ধরণ: সায়েন্স ফিকশন
মুদ্রিত মূল্য: ১৮০/-
প্রকাশনী: শব্দভূমি

জন্ম কুমিল্লায়। আব্দুল্লাহেল মুহিত ও আঞ্জুমান নাহারের বড় ছেলে। কুমিল্লার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামে বাড়ি। গাছ-গাছালির ছায়ায়, লতাগুল্মের সাথে বড় হওয়া। পাখি ও ফড়িংয়ের পেছনে ছুটে আর ছিপ-নাটাই হাতে কেটেছে শৈশব। তবে কৈশোর কেটেছে নাগরিক শহর ঢাকায়। পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ‘কুমিল্লা পলিটেকনিক্যাল কোয়ার্টার স্কুলে’। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত নিজ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়া হয়। পরে পাশের গ্রামের মাদরাসায় পড়া শুরু। পাঠের শেষ হয় ঢাকায়। লেখালেখি শুরু ছড়া-কবিতা দিয়ে, তবে থিতু হওয়া গল্প-উপন্যাসে। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাব্যচর্চা বাদ পড়েনি। ভিন্ন ভিন্ন লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশ হলেও বনে-বাদাড়ে কিশোর দল প্রকাশিত প্রথম বই। আওয়ার ইসলাম নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করা হয় পাঁচ বছর। চলমান সময়ে নতুন কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।