মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিবরামপুর হাট

মুহাম্মাদ ইয়ামিন।।

হাট মানে একসাথে অনেক পন্যের সমারোহ। যেখান থেকে ক্রেতা তার চাহিদা মতো সব ধরণের পন্য একসাথে ক্রয় করতে পারেন। এমনই একটা হাট হলো মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিবরামপুরের হাট। শত বছরের হাটটি শ্রীনগর থানার বাড়ৈখালী ইউনিয়নে অবস্থিত। সংশ্লিষ্টরা জানান, শিবরামপুর হাটের গোড়াপত্তন কবে হয়েছিল তার সঠিক তথ্য কারও জানা নেই। সবাই বাপ-দাদার কাছ থেকে জেনেছেন ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে নৌকার হাট বসে।

প্রতি শনিবার দূরদূরান্ত থেকে দোকানীরা এসে হাটটি জমিয়ে তোলে। একদিকে যেমন বিক্রেতা তাদের বিক্রি উপযুক্ত পন্য দূর থেকে হাটে নিয়ে আসে, অন্য দিকে ক্রেতারাও পন্য কেনার জন্য বহু দূর থেকে এখানে আসে। ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনে হাটটি বেশ জমে উঠে প্রাণবন্ত। মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ থেকেও আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এছাড়াও হাটটি বেশ পুরনো হওয়ার কারণে দর্শনার্থীও আসে অনেক।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, চাল-ডাল, পিয়াজ-রসুন, আলু, সবজি, তাতের লুঙ্গি, জামা-কাপড়, ছাড়াও এখানে বিক্রি হয়, গাছের চাড়া, দা, ছুড়ি-কাঁচি, নিমকি, মন্ডা-মিঠাই, খাসতা, মিষ্টি। হাটের বেশ জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হলো মিষ্টি, ডাল কিংবা হালুয়া দিয়ে ছেঁকা রুটি খাওয়া। ছেঁকা রুটিটি তৈরী করা হয় লোহার পাতের উপর তাপ প্রবাহের মাধ্যমে। এর আকৃতিও হয় বেশ বড় ও স্বাদে মুখরোচক। একবার খেলে তা বারবার খেতে ইচ্ছে করে।

হাটটির পশ্চিমকোণে চলে কবুতর কেনাবেচার আয়োজন। বিক্রেতা নানান ধরণের কবুতর নিয়ে আসেন এখানে— গিরিবাজ, বাঙ্লা, দেশী, ছোটা, লাক্ষা। ক্রেতারাও পছন্দ মতো কবুতর কিনেন এখান থেকে।

ছোট বড় সব ধরণের কাঠ ও নৌকা ক্রয় বিক্রয় হয় এই হাটে। এই হাটে নৌকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত ৫০জন কারিগর। আশপাশের উপজেলাগুলোতে কারিগর ও বেপারীরা নৌকা নিয়ে আসেন হাটে। সপ্তাহে বিক্রি হয় দেড়শো থেকে দুইশো নৌকা। সারাবছরই বসে এই নৌকার হাট, তবে বর্ষায় বাড়ে এর কদর।

জানা গেছে, নৌকা তৈরিতে সাধারণত কড়ই, মেহগনি আর চাম্বল কাঠ ব্যবহার করা হয়। এসব কাঠে মাটিয়া তেল, আলকাতরা, লোহার পেরেকসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হয়। আট থেকে ১২ হাত দৈর্ঘ্য এবং দেড় থেকে দুই হাত প্রস্থের একেকটি নৌকা তৈরিতে কয়েকদিন সময় লাগে। তবে অভিজ্ঞ মিস্ত্রিরা এক থেকে দেড় দিনের মধ্যেই একটি নৌকা তৈরি করতে পারেন। বর্ষা এলেই নৌকা তৈরির ধুম পড়ে কারিগরদের। বর্ষার পানি যতদিন স্থায়ী হয় ততদিন নৌকা বেচাকেনা হয়।

হাটের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা বাড়ৈখালী ইউনিউন থেকে এসে খারসুর দিয়ে বের হয়েছে। হাটটির সাথে সংযুক্ত একটি শাখা নদীও রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মালামাল হাটে নিয়ে আসা কিংবা হাট থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শাখা নদীটি বেশ সহায়ক। নদীটি গ্রীননগর হয়ে শেখনগর ইছামতি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

মুহাম্মাদ রাজিব নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এটি মুন্সিগঞ্জের অতিপ্রাচীন ও পুরনো একটি হাট। শৈশব থেকেই আমরা এ হাট দেখে আসছি। হাটটি সপ্তাহের প্রতি শনিবার বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে সাথে এখানে অনেক দূর্লভ পন্যও পাওয়া যায়, এই যেমন— গাব, চালতা ইত্যাদি।

এছাড়াও ঈদুল আদহায় এখানে বিশাল গরুর হাট বসে। আশেপাশের অধিকাংশ মানুষই কুরবানী দেওয়ার জন্য এখান থেকে গরু কিনেন।