পাখিকে সুস্থ রাখার উপায়

ডেস্ক: পাখিকে সুস্থ রাখতে আমরা কত কিছুই না করি, ভালো খাবার দেই, দামি খাচায় রাখি, বোতল বোতল ঔষধ ও খাওয়াই অনেকে। কিন্ত পাখি সুস্থ রাখার জন্য যে জিনিসটি সবার আগে প্রয়োজন, সেটাই ভুলে যাই– পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। পাখি অসুস্থ হলে আমরা যে পরিমাণ সময় আর অর্থ ব্যয় করি, তার অর্ধেকও যদি এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়, তাহলে পাখির ৮০-৯০% রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

পাখির খাঁচার পরিচ্ছন্নতা 
পাখি পোষার জন্য যেটি সবার আগে প্রয়োজন, সেটি হলো খাঁচা। যেহেতু পাখি দিনরাত ২৪ ঘন্টাই খাঁচার সংস্পর্শে থাকে, সেহেতু খাঁচার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রতি মাসে অন্তত ১ বার পাখি বের করে কুসুম গরম নিমের দ্রবণ দিয়ে খাঁচা ভালোমত ঘষে মেজে ধৌত করতে হবে। তারপর একটানা ৩-৫ ঘন্টা কড়া রোদে শুকাতে হবে। তাহলে সব জীবাণু দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে, খাঁচার তলা পরিষ্কার রাখা বেশি জরুরী, কেননা এটা বেশি ময়লা হয় এবং পাখি এর ওপর দিয়েই হাঁটাহাঁটি করে। অনেকে টিমসেন জাতীয় ঔষধ স্প্রে করেন এবং মনে করেন খাচা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্ত ময়লার ওপর স্প্রে করলে তা কখনোই পরিষ্কার হয়ে যায় না। সুতরাং খাচা ঘষে ঘষে ধুতে হবে। পুরানো জং ধরা খাঁচা হলে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। খাঁচার ট্রে সপ্তাহে অন্তত ২ বার পরিষ্কার করতে হবে এবং একই উপায়ে, নিমের দ্রবন দিয়ে ঘষে ঘষে ধৌত করে রোদে শুকাতে হবে। ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রের ওপর খবরের কাগজ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। খাঁচার তলায় কাগজ দেওয়া যাবে না, কারন মল জমে থাকলে পাখি খেয়ে অসুস্থ হবে। সেজন্য ট্রেতে বিছিয়ে দিতে হবে এবং সম্ভব হলে প্রতি ১-২ দিন অন্তর পাল্টে দিতে হবে।

পাখির খাবারের পরিচ্ছন্নতা
বাজার থেকে খোলা সীডমিক্স কিনে এনে সরাসরি পাখিকে খেতে দিবেন না। এতে ধূলাবালি সহ আরো অনেক জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও কীটনাশক থাকে। অন্তত ৩ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে, ভালো করে ঝেড়ে তারপর পাখিকে খেতে দিবেন। সম্ভব হলে বড় গামলা বা বালতির মধ্যে পানিতে ধুয়ে, রোদে শুকিয়ে দিবেন। তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। খাবারের পট সবসময় পরিষ্কার রাখবেন। বেশি মল জমে থাকলে, তার মধ্যে খাবার না দিয়ে, লবণ পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর খাবার দিবেন। ইদুর, তেলাপোকা বা অন্য কিছুর বিষ্ঠা থাকলে সেই খাবার ফেলে দিবেন এবং পাত্র ধুয়ে নিবেন। এদের উপদ্রব খুব বেশি হলে রাতের বেলা খাবারের পাত্র বের করে রাখবেন। শাকসবজি, ফলমূল অবশ্যই ৩-৪ বার ডলে ডলে ধুয়ে দিবেন।

পাখির পানির পরিচ্ছন্নতা
পানির অপর নাম জীবন, কিন্ত সেটা মরণ হয়ে যায় যখন পাখির মলের ইউরিন পানির সাথে মিশে যায় এবং পাখির শরীরে প্রবেশ করে। পাখির পানি দিনে অন্তত দুইবার পাল্টে দেওয়া উচিৎ। প্রতিবার পানির পাত্র ভাল করে ধুয়ে দিবেন। তবে ধোয়ার সময় কোনরকম মেডিসিন ব্যবহার করবেন না, নিমের দ্রবন অথবা লবণ মিশ্রিত পানি ব্যবহার করতে পারেন। পানির পাত্র একটানা ব্যবহার করলে পাত্রের তলায় স্যাতঁসেতে ক্ষতিকর পদার্থ জমা হয়, তাই সপ্তাহে অন্তত ১ বার পাত্র গুলা কড়া রোদে শুকাবেন। যেকোনো দ্রবণ বা ঔষধ মিশ্রিত পানি ৬-৭ ঘন্টার বেশি খাঁচায় রাখবেন না।

পাখির ঘরের পরিচ্ছন্নতা
যাদের পাখির জন্য আলাদা ঘর আছে, তারা সর্বদা মেঝে পরিষ্কার রাখবেন। কারণ মেঝে অপরিষ্কার থাকলে পিঁপড়ার উপদ্রব খুব বেড়ে যায়। পানি চলাচলের সুব্যবস্থা থাকলে মেঝে ধুয়ে দিতে পারেন। ঘরের কোনাকানা গুলোতে নিমের দ্রবণ স্প্রে করবেন। ইঁদুর বা তেলাপোকা থাকতে পারে, এমন কিছু ঘরে রাখবেন না, যেমন অতিরিক্ত হাড়ি বা বক্স।

পাখির পরিচ্ছন্নতা
অনেকেই ঠান্ডা লাগার ভয়ে বা অন্যান্য কারণে পাখিকে গোসল করান না এবং নিয়মিত বিভিন্ন রকম সমস্যা নিয়ে হাজির হন, যেমন– পাখি গা চুলকাচ্ছে, পালক পড়ছে, নড়াচড়া কম করছে, গায় পোকা দেখা যাচ্ছে আরো কত কি! এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো নিয়মিত গোসল। প্রতিদিন সকাল ১০-১১ টার দিকে পাখিকে গোসলের জন্য পানি দিবেন। নিজে থেকে না করলে স্প্রে করবেন। অনেকে ডেটল, স্যাভলন ইত্যাদি মিশিয়ে স্প্রে করেন, এটা খুবই বিপদজনক, পাখির জন্য। যদি পানির সাথে কিছু মিক্স করতেই চান, সেটা একমাত্র নিমের দ্রবণ। এটা পাখির শরীরে কোনো পোকা থাকলে দূর করবে এবং পাখিকে সুস্থ রাখবে।

আমাদের মধ্যে দুইটা ভুল ধারণা খুব বেশি পরিমানে বিরাজমান। এক. শীতকালে পাখিকে গোসল করানো যাবে না। দুই. ডিমে বসা পাখিকে গোসল করানো যাবে না।

জেনে রাখা ভালো, শীতে পাখিকে গোসল অবশ্যই করানো যাবে এবং সেটা রোদে রেখে করালে ভালো হয়। তাছাড়া ডিমে বসা পাখির শরীরের তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে, যা গোসলের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এবং পাখি ভেজা শরীরে ডিমে বসলে কোনো সমস্যা হয় না, বরং এটি ডিম জমতে আরো সাহাজ্য করে। সুতরাং পাখিকে নিয়মিত গোসল করানো আবশ্যক।

পারিপার্শ্বিক পরিচ্ছন্নতা
পাখির খাঁচা, খাবার সবই পরিষ্কার রাখলেন, কিন্ত চারপাশটা যদি অপরিষ্কার, তাহলে কোনো লাভ হবে না। আশেপাশে জঙ্গল বা পঁচা ডোবা থাকলে, মশার উপদ্রব হবে, সাথে পাখির বিভিন্ন রকম রোগ। পাশাপাশি পিঁপড়া, ইঁদুর, টিকটিকি এদের উপদ্রব ও বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আপনার পাখির খাচার চারপাশ সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। যাদের আলাদা ঘর আছে, ঘরের চারপাশ পরিষ্কার রাখবেন। সম্ভব হলে কয়েকটা ঘৃতকুমারী, তুলসি, সজনে ও নিম গাছ লাগাবেন। এগুলো সৌন্দর্য যেমন বাড়াবে, সাথে আপনার পাখির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।