লৌকিকতা পছন্দ করে না ইসলাম

লৌকিকতা, কৃত্রিমতা, লৌকিকতা ইসলাম পছন্দ করে না। এসব জিনিস মানুষকে অসার করে দেয়। প্রাণহীন করে দেয়। ন্যাকামি, লৌকিকতা মানুষকে নীতি-নৈতিকতাহীন ও মূল্যবোধহীন করে দেয়। লোক-দেখানো কাজ, আত্মপ্রদর্শন, মুনাফিকি ও ভণ্ডামি ইত্যাদিকে ইসলামি পরিভাষায় রিয়া বলে।

রসুল সা. বলেন, আমি তোমাদের উপর যে জিনিসটিকে বেশি ভয় করি, তা হলো, ছোট শিরক। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া বা লৌকিকতা, ন্যাকামি।

আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেবেন, তখন রিয়াকারীকে বলবেন, যাও দুনিয়াতে যাদের তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোনো সওয়াব পাও কিনা? (মুসনাদে আহমদ ২৩৬৮১)

ইসলামে কৃত্রিমতার কোনো স্থান নেই। প্রকৃত মুসলমানের তালিকায় থাকতে হলে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে লৌকিকতা, ন্যাকামি করে ইসলামে থাকা যায় না। ঈমানের দাবি হলো একনিষ্ঠতা। কৃত্রিমতা, রিয়া বা লৌকিকতা, ন্যাকামি ঈমানে এসবের কোনো স্থান নেই। তাই প্রকৃত মুমিন হতে হলে কৃত্রিমতা, লৌকিকতা, ন্যাকামি ত্যাগ করতে হবে।

পৃথিবীতে কিছু মানুষ ভালোবাসাতেও ন্যাকামি করে। অথচ দুনিয়ার ভালোবাসার চেয়ে আল্লাহকে ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশি। আল্লাহকে ভালোবাসায় কোনো লৌকিকতা থাকে না। বেশির ভাগ মানুষ মানুষকে ভালোবাসে স্বার্থের জন্য। স্বার্থ শেষ, ভালোবাসাও শেষ।

কিন্তু যাদের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়, তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে না। এইজন্যই যে মুসলিম অপর মুসলিমকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামতের দিন আরশের নিচে স্থান দিবেন।

আল্লাহর জন্য ভালোবাসালে সে ভালোবাসায় কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না। তারা ভালোবাসে শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর ভালোবাসা পূর্ণতা পাওয়ার শর্তই হচ্ছে তা নিঃস্বার্থ হওয়া। মানুষের কল্যাণে কিছু করলেও তা একমাত্র আল্লাহর জন্য করা।

যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করে, মানুষের উপকার করে, রসুল সা. তাদের পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

রসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল, সে ব্যক্তি নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল। (আবু দাউদ ৪৬৮১)

আল্লাহর ইবাদতে কেউ যদি ন্যাকামি করে তারও কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য ইখলাস পূর্বশর্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর তাদের শুধু এই নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তারই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে আর নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দীন। (সুরা বায়্যিনাহ ৫)